অতিমাত্রা; শ্লোক - ৪৬৭

অন্ধ ভক্তি প্রেম, বা অন্ধ ঘৃণা
উভয় গোঁড়ামী বলেই গণ্য হয়।
জনস্বার্থে উহা ক্ষতির কারণ
সমর্থন যোগ্য কোনটাই নয়।

পাদটীকা: অতিমাত্রায় সুমিষ্ট চিনি বা অতিমাত্রায় লবণ গ্রহণ যেমন ব্যক্তির স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ বয়ে আনে, অনুরূপ কোন বিশেষ ব্যক্তিতে বা বিষয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রেম, বা মাত্রাতিরিক্ত ঘৃণা পোষণ করা, উক্ত ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ বয়ে আনতে পারে। মোট কথা অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অতিমাত্রা; শ্লোক - ৪৬৭


কারণ; শ্লোক - ৪৪৯

অকারণে না জ্বলে আগুন
না ওঠে কখনো ধোঁয়া।
হিংসা বিবাদ কারণেই হয়
স্বার্থে লাগিলে ছোঁয়া।

পাদটীকা: সব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পিছনে এক বা একাধিক ক্রিয়া বা কারণ নিহিত থাকে। অকারণে সাধারণত কখনো কিছুই ঘটে না। 
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধোঁয়া কারণ; শ্লোক - ৪৪৯


জন্মের কারণ; শ্লোক - ৪৫০

মানুষের জন্ম সূচনায়
নর নারীর যৌথ কারণ।
নর করে শুক্রাণু দান
নারী করে গর্ভে ধারণ। 

পাদটীকা: পৌরাণিক গল্প কাহিনী ব্যতিত, বাস্তবে নারী কখনোই পুরুষের শুক্রাণু ব্যাতিত গর্ভধারণ করতে পারে না। পুরুষের শুক্রাণু সহিত নারীর ডিম্বাণুর মিলন তথা নারীর অবদান ব্যতিত তা মানব শিশু রূপে ভূমিষ্ট হতে পারে না। মানব শিশুর জন্মে নর ও নারী উভয় পক্ষের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

জন্মের কারণ; শ্লোক - ৪৫০


সূচনা; শ্লোক - ২০২

বন্ধুত্ব, শত্রুতা হয় না সূচনা
গড়ে না সম্পর্ক অকারণ।
সব সূচনায় কারণ থাকে,
ভাঙ্গে সম্পর্ক থাকে কারণ।

পাদটীকা: সম্পর্ক গড়ার বা ভাঙার পিছে এক বা একাধিক কারণ থাকে। অকারণে কোন কিছুই ভাঙে না বা গড়ে ওঠে না।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

সূচনা; শ্লোক - ২০২


বারণ; শ্লোক - ৭

যাহা আমার লাগে ভালো,
তাহা তোমার মন্দ লাগার কারণ।
যে কাজ আমি করে খুশি,
সে কাজ করিতে তুমি করো বারণ।

পাদটীকা: কোন বিষয় বা বস্তু আপনি পছন্দ করেন বলে আপনার সুহৃদ ব্যক্তিও তা আপনার মতো করে পছন্দ করবেন, আপনার মতো করে চিন্তা করবেন, এমন আকাঙ্খা করা উচিত নয়। কারণ আমরা প্রতিটি মানুষ স্বতন্ত্র, তাই সকলের অভিরুচি, এবং অভিমত ভিন্ন।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বারণ; শ্লোক - ৭


বিভীষণ; শ্লোক - ৪৩০

পরাজিত হয় রাবণ;
লঙ্কার গদি রাম নয় পায় বিভীষণ।
স্বজন ক্ষতির কারণ,
অন্ধবিশ্বাস, বিশ্বাস করিলে ভীষণ।

পাদটীকা: “ঘরের শত্রু বিভীষণ” পৌরাণিক গল্প কাহিনীর ভিত্তিতে একটি প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন। কালে কালে আমাদের সমাজে বিভীষণ এর মত চরিত্রের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে, যেখানে ঘরের বিশ্বাস ভাজন সদস্যই ঘর ভাঙার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ঘরের শত্রু বিভীষণ

ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭

ধার্মিকের অভিযোগ, “ধর্মীয় বিশ্বাস
হয়েছে আহত, ধর্মাবতার হয়েছে নত”।
ধর্ম মতে, “দৃঢ় বিশ্বাসী স্বর্গ লোকে;
নরকে যাবে, দুর্বল বিশ্বাসী আছে যত”।

পাদটীকা: একটি বিশেষ শ্রেণির ধার্মিক প্রায়শই অভিযোগ করে—তাদের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয়েছে, ধর্মাবতারকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ। অথচ ধর্ম নিজেই বলে—দৃঢ় বিশ্বাসীই স্বর্গের যোগ্য, আর দুর্বল বিশ্বাসী নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: বিশ্বাস কি এতটাই দুর্বল যে সামান্য প্রশ্ন বা মতভেদেই তা ভেঙে পড়ে? নরক ও স্বর্গের চাবিকাঠি-ই বা কার হাতে?

এই ভাবনাগুলো এক গভীর ব্যঙ্গচিন্তার জন্ম দেয়—ধর্ম নয়, সংকটে পড়েছে মানুষের মনোভাব ও একচেটিয়া অধিকারবোধ। কারণ, যা সত্যিকারে দৃঢ়—তা হাজারো প্রশ্নেও নত হয় না; আর যা ঠুনকো, তা সামান্য স্পর্শেই আহত হয়। যদি কোনো ধার্মিক তার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন, তবে ধরে নেওয়া যায়—ঈশ্বরপ্রদত্ত ঈমানের পরীক্ষাতেও তিনি ব্যর্থ হবেন, কারণ তার বিশ্বাস মজবুত নয়, কেবল আবেগনির্ভর। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭


কেরামত; শ্লোক - ৪৯

করিওনা হেলা, ভাবিওনা 
 কাউকে অতি ক্ষূদ্রতর;
কেরামতে দেখায় কেরামতি 
ঝড়ের দিনে বড়সর।

পাদটীকা: হাতি কাঁদাতে পড়লে চামচিকা লাথি মারে, এমনকি ক্ষূদ্র পিঁপড়াও বৃহৎ হাতির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কার মনে কী আছে তা বাহির দেখে বলা যায় না, পরহিংসা পরায়ণ লোক সুযোগ পেলেই সহিংস হয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই কাউকে কখনো তুচ্ছ ভেবে অবহেলা করা উচিত নয়।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কেরামত; শ্লোক - ৪৯


মিনি কাব্য - ২৮৩

মিনি কাব্য
আরিফুর রহমান
-----------------
এক দৃষ্টিতে যাহা আলোর কারণ
অন্য দৃষ্ঠিতে ছায়ার।
এক পক্ষে যাহা নির্দয়তা
অন্য পক্ষে তা মায়ার।

ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯

বিজ্ঞান দিবে সমাধা, ত্রাণ
শত্রু অদৃশ্যমান।
ঈশ্বর নয়, মানুষ আনবে
সুদিন, সমাধান।

পাদটীকা: বর্তমান বিশ্বের সকলেই এক কঠিন সময় পার করছে। বর্তমানে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় বিষয়। করোনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কোনো অদৃশ্য সত্তা নয় রক্ত মাংসের মানুষেরাই আবিষ্কার করেছে, শিগ্রই সুদিন আসবে। কারণ, অদৃশ্য কোনো ঈশ্বর নয়, বরং মানুষ ও তার বিজ্ঞানই সংকটের প্রকৃত সমাধান আনতে সক্ষম। অদৃশ্য শত্রু—হোক তা ভাইরাস, দূষণ, বা অজ্ঞানতা—এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানই হাতিয়ার। এখানে ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস নয়, বরং অন্ধ বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা—যেখানে সুদিন আসে মানুষ ও মননের হাত ধরে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯


রাজনীতি রন্ধন; শ্লোক - ৩৫০

ধর্মের তেলে তরকারী রাঁধো
আমিষ কিম্বা নিরামিষ।
ঐ তেলেতেই রাজনীতি ভাজো
সিন্নি, প্রসাদে একই বিষ। 

পাদটীকা: ধর্মের সাথে রাজনীতি মিশালে ধর্ম বিকৃত এবং বিতর্কিত হয়, কারণ সেটি আর ধর্ম থাকে না, তখন সেটি হয় রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের হাতিয়ার। 
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

নমকহারাম; শ্লোক - ৫০৮

নমক খাওয়াইবে যত করে 
নমকহারাম বাড়িবে তত হারে। 
উপকার করিবে যত করে 
অকৃতজ্ঞ বাড়িবে তত হারে। 
 
পাদটীকা: যত বেশি কারো উপকার করা হয়, ততই বাড়তে পারে অকৃতজ্ঞতার পরিমাণ। যেমন কাউকে আহার করালে বা সাহায্য করলে প্রত্যাশিত কৃতজ্ঞতা সবসময় মেলে না—বরং অনেক সময় সেই মানুষটিই হয়ে ওঠে অকৃতজ্ঞ বা ‘নমকহারাম’। উপকার করা মহত্ত্বের লক্ষণ হলেও প্রত্যাশা না রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কৃতজ্ঞতা একটি বিরল গুণ, যা সবার মধ্যে থাকে না।  - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

নমকহারাম; শ্লোক - ৫০৮


জলাধার; শ্লোক - ৪৫

সব স্থল ভূমি দেশ মহাদেশ 
খন্ড বিখন্ড দ্বীপমালা মাত্র। 
নীলাভ ধরণীর উপরিভাগ 
এক বিশাল জলাধার পাত্র। 

পাদটীকা: জল এবং স্থলের পরিমান বিচারে পৃথিবীকে ভূলোক না বলে জলাধার বলাই বেশি যৌক্তিক। কারণ, পৃথিবীর মোট আয়তনের তিন ভাগ হলো জল আর মাত্র এক ভাগ হলো স্থল।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

জলাধার; শ্লোক - ৪৫


মিনি কাব্য - ৩১৯

মিনি কাব্য - ৩১৯
আরিফুর রহমান
-----------------
ঘটতব্য না ঘটার পিছে
নিষেধ বা বারণ থাকে।
যাহা ঘটে তা ঘটার পিছে
নিশ্চিত কারণ থাকে।

অতিথি; শ্লোক - ৪৬

যে চলে যেতে চায়
তাকে এগিয়ে দাও।
প্রয়োজনে মনটাকে
পাথরে বেধে নাও।

পাদটীকা: যে ব্যক্তি তোমাকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকে যেতে দেয়াই শ্রেয়। যদি কখনো সে তোমাকে প্রয়োজন এবং প্রিয়জন মনে করে তাহলে সে আপনা আপনি ফিড়ে  আসবে। কারণ, বলপূর্বক কখনো কোন সুসম্পর্ক স্থাপন করা যায় না।  
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।
অতিথি; শ্লোক - ৪৬


দ্বৈতচরিত্র; শ্লোক - ৫১২

যে যায় লঙ্কায়,
সেই হয় রাবণ।
রক্ষক হয়ে সে,
ধ্বংস করে বন।

পাদটীকা: ক্ষমতা ও লোভের দ্বৈতচরিত্র। “যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ”—অর্থাৎ কেউ যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছে যায়, তখন সে নিজেই রাবণের মতো অহংকারী ও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। আর “রক্ষক হয়ে সে, ধ্বংস করে বন”—অর্থাৎ, যাদের দায়িত্ব রক্ষা করার, অনেক সময় তারাই লোভ, স্বার্থ বা ক্ষমতার কারণে সর্বনাশের কারণ হয়ে ওঠে। প্রকৃতি মানুষকে ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করে—যদি নৈতিকতা না থাকে, রক্ষকও ধ্বংসকারী হয়ে ওঠে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দ্বৈতচরিত্র; শ্লোক - ৫১২


বন্ধু অনুসন্ধান; শ্লোক - ৩১

তুমি বন্ধু নাকি শত্রু
কেমনে আমি বুঝি?
শত্রু দ্বারা কান্ত আমি,
বন্ধুর দেখা খুঁজি।

পাদটীকা: জীবনে শত্রু কেউ চায় না, সকলেই বন্ধু চায়। কারণ, শত্রু অমঙ্গল কামনা করে নয়তো, অনিষ্ট করার চেষ্টা করে। তাই শান্তিতে জীবনযাপন করতে চাইলে বন্ধু এবং বন্ধুপূর্ণ পরিবেশ প্রয়োজন।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

 

মিথ্যার রাজত্ব; শ্লোক - ৪৭৮

মিথ্যার সংখ্যা ক্রমশঃ ঘন,
আগাছায় বাগান হইবে বন।
সত্যের সততা হইবে পরাজিত
মিথ্যেবাদী শাসিবে জনগণ।

পাদটীকা: যে বাগানে ফুলগাছের তুলনায় আগাছার সংখ্যা বেশি সেটি কে বাগান না বলে জঙ্গল বলাই শ্রেয়, কারণ সে বাগান ভূমি আগাছাদের দখলে। যে সমাজে সৎলোক দূর্বল, সে সমাজ অসৎ লোকের অধীনে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

মিথ্যার রাজত্ব; শ্লোক - ৪৭৮


দরিদ্র রাষ্ট্র; শ্লোক -৪৩৪

রাষ্ট্র দরিদ্র হওয়ার মূল কারণ
দারিদ্র সীমার নীচে থাকা দরিদ্র গণে নয়।
সে রাষ্ট্র মাথা তুলে না দাড়ায়
রক্ষক যেথা ভক্ষক হয়ে লুটেপুটে সব খায়।

পাদটীকা: রাষ্ট্র গরিব হওয়ার পিছে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী নাগরিকদের ভূমিকা শূণ্য। রাষ্ট্র তখনই গরিব হয় যখন রাষ্ট্রে সুষম বন্টনের অভাব দেখা দেয়, প্রশাসনে যখন দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটে, শাসক এবং রক্ষক শ্রেণী যখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ কুক্ষিগত করে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


দরিদ্র রাষ্ট্র ভিক্ষুক ভিক্ষা করছেন

পাল্লা; শ্লোক - ৩০

মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে
সামনে এগিয়ে যাই।
অসীমের সাথে পাল্লা দিয়ে
বার বার হোঁচট খাই।

পাদটীকা: আমরা পরষ্পরের সাথে প্রতিযোগীতা করে সন্মূখে অগ্রসর হই, কিন্ত যে আমাদের চেয়ে বড় বা অসীম, তাঁর সাথে প্রতিযোগীতা করে পেরে উঠিন না। কারণ, মানুষ তার স্বীয় ক্ষমতা বা যোগ্যতার বাইরে কিছু করতে পারে না।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

পাল্লা; শ্লোক - ৩০


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন