বাস্তববাদী জীবনদর্শন; শ্লোক - ৫১৬

জীবন সত্য, জীবন চরম;
স্বর্গ, নরক, পরকাল ভ্রম।
বাঁচার মত বাঁচো মানুষ; 
যতক্ষণ দেহে আছে দম।

পাদটীকা: বাস্তববাদী জীবনদর্শন। জীবনই চরম সত্য—যা আমরা এখন বাঁচছি, সেটিই বাস্তব। স্বর্গ, নরক, পরকাল এসব ধারণা মূলত বিশ্বাসের বশবর্তী, যার অস্তিত্ব নিয়েও নানা মতভেদ আছে। তাই ভবিষ্যতের অনিশ্চিত ভ্রমের পিছনে না ছুটে, যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ মানুষের মতো করে সচেতনভাবে, সাহসের সঙ্গে জীবনকে উপভোগ করতে শেখাই শ্রেয়। জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে বর্তমানেই বাঁচো, ভালো থেকো, ভালো রাখো। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বাস্তববাদী জীবনদর্শন; শ্লোক - ৫১৬


করুণা ও সম্মান; শ্লোক - ৫১৫

কাঙ্গালকে সবে করুণা করে,
নাহি করে সম্মান।
যোগ্য কাজে সম্মান মেলে,
বাড়ে গুণীর মান। 

পাদটীকা: দান-করুণা ও প্রকৃত সম্মানের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। সমাজ প্রায়শই দরিদ্রকে করুণা করে, কিন্তু তাতে থাকে না মর্যাদা বা সম্মানের অনুভব। সম্মান তখনই আসে, যখন কেউ যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু অর্জন করে। সহানুভূতি ভালো, তবে প্রকৃত সম্মান কেবল গুণ, নৈতিকতা ও কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

করুণা ও সম্মান; শ্লোক - ৫১৫

রূপান্তরের আশ্বাস; শ্লোক - ৫১৪

কঠিন বরফ গলে যায়,
হয়ে যায় তরল।
কঠিন অংক চর্চা করো
হয়ে যাবে সরল।

পাদটীকা: সময়ের সাথে ধৈর্যশীল হয়ে অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কঠিন বরফ সময় ও উত্তাপে গলে গিয়ে তরলে রূপ নেয়, তেমনি জটিল অংক বা সমস্যাও ধীরে ধীরে মনোযোগ ও চেষ্টায় সহজ হয়ে ওঠে। কোনো কিছুই স্থায়ীভাবে কঠিন নয়; সময়, অধ্যবসায় ও মনোযোগ থাকলে জটিলতা সরলতায় রূপ নিতে বাধ্য। জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতেও হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে কঠিনতম কাজও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

রূপান্তরের আশ্বাস; শ্লোক - ৫১৪


অহেতুক; শ্লোক - ৫০৯

না জেনে চাপার জোড়ে হুজুরগিরি হয়, 
পান্ডিত্য নয়। 
মুর্খের সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান তর্ক-বিতর্ক, 
সময় অপচয়। 
 
পাদটীকা: জোরে কথা বললেই কেউ জ্ঞানী হয় না। অনেক সময় মানুষ না জেনেও উচ্চস্বরে কথা বলে বা কথার দাপটে নিজেকে ‘হুজুর’ বা পণ্ডিত প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু প্রকৃত পাণ্ডিত্য আসে বিনয়, যুক্তি ও সত্যজ্ঞান থেকে। পাশাপাশি, যারা জ্ঞানের আলো থেকে দূরে থেকে যুক্তিহীন বিতর্কে লিপ্ত থাকে, তাদের সঙ্গে তর্ক করা একান্তই সময়ের অপচয়। জ্ঞানচর্চার প্রকৃত মানসিকতা ও আলোচনার সঠিক পরিবেশ থাকা সবার জন্য জরুরি। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অহেতুক; শ্লোক - ৫০৯


হারামখোর; শ্লোক - ৫০৭

চুরি করে খায় খাদ্য 
চোরে চুরি করে পানীয়। 
হারাম খাদ্য ছুই না 
হালাল পেলে জানিয়ো। 

পাদটীকা: কোন কোন মানুষ দ্বৈত নীতি নিয়ে চলে। জনসমক্ষে নিজেকে ধার্মিক হিসেবে জাহির করে, হালাল খাই হালাল খাই বলে চিল্লায়। পক্ষান্তরে, গোপনে অন্যায় পন্থা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ ধরণের ব্যক্তি মোটেও ধার্মীক নয়, নিজের কূপ্রবৃত্তি সমূহ ঢাকার জন্য ধর্মের বুলি আওরায় এবং ধর্মীয় লেবাস ধারণ করে। এই শ্রেণীর ব্যক্তি যে ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে সেই ধর্মের জন্যই এরা ক্ষতিকর, এবং যে সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে সেই সমাজের জন্যই এরা ক্ষতিকর। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

হারামখোর; শ্লোক - ৫০৭


চোরের বড় গলা; শ্লোক - ৫০৬

চুরি করে খেয়ে খেয়ে 
চোর ধার্মীক সাজে। 
সাধুকে দেয় উপদেশ 
“ভালো হও কাজে”। 

পাদটীকা: প্রবাদ আছে চোরের বড় গলা। বাক্যটি শুধু প্রবাদে নয় বাস্তবেও দেখা যায়। বাস্তবেও কোন কোন চোর বা অসৎ ব্যক্তি, সাধু বা সৎ ব্যক্তিদের পিঠ চাপড়ে “ভালো হয়ে যাও” বলে বড় গলায় উপদেশ দিয়ে থাকে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

চোরের বড় গলা; শ্লোক - ৫০৬


কালের খাঁচা; শ্লোক - ৫০৫

আটকে আছি বর্তমানে ফাঁদে,
ভাবী ভবিষ্যতে ভ্রমে।
আতীত গেছে মুছে; বিভূতিরা
স্মৃতির পাতায় জমে।

পাদটীকা: আমরা সবাই মহাকালের বর্তমান সময়েই বর্তমান। আমরা ঘড়ির কাঁটার মতো ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি আর ভবিষ্যতটাকেও বর্তমানে রূপান্তরিত করছি। বর্তমান অতীতে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বর্তমানকে হারাচ্ছি কালের গর্ভে। কোন কোন বর্তমান অতীতে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি থেকে, আর কোন কোন অতীত ঠাঁই পাচ্ছে চিত্রে ও স্মৃতিতে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কালের খাঁচা; শ্লোক - ৫০৫


প্রতিকূলতার আহ্বান; শ্লোক - ৫০৪

হে প্রাণ, প্রতিকূলতায় লড়ো;
প্রকৃতি যুদ্ধার্থে মাতে, করে আহ্বান।
ভূবনে বিজয়ীরা বিরাজমান;
হও বিজয়ী নয়তো বিলুপ্ত, ম্রিয়মান। 

পাদটীকা: এ পৃথিবী চাষাবাদ যোগ্য জমি তুল্য, আর প্রাণ শস‍্য তুল্য। একই জমিতে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন শস‍্য ফলে। শস‍্য যদি পরজীবি বা প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা রোগাক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বা বিলুপ্ত হয়ে যায়। অনুরূপ সময়ের স্রোতে আপন অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বহু প্রাণী, উদ্ভিদ, সমাজ, রাষ্ট্র এবং সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একদিন মানুষও বিলুপ্ত হয়ে যাবে যদি সে প্রতিকূলতাকে জয় করে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

প্রতিকূলতার আহ্বান; শ্লোক - ৫০৪


কুরবানী; শ্লোক - ৫০৩

মনের পশু মনেই রইলো, 
খোদায় নাহি ভয়! 
নিরীহ প্রাণী কুরবানীতে 
খোদা কী তুষ্ঠ হয়? 

পাদটীকা: যে মানুষ মনের পশুত্বকে কুরবানী বা ত্যাগ করে ঈশ্বরকে জয় করতে ব্যর্থ। সেই মানুষের মনের পশুকে জিইয়ে রেখে নিরীহ চতুষ্পদী প্রাণীকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হত্যা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। যে মানুষের মনের পশুত্ব রয়ে যায়, যার মধ্যে করুণা, সহানুভূতি ও খোদাভীতি নেই, সে যদি শুধু রীতির বশে নিরীহ প্রাণী কুরবানী করে, তবে তাতে ঈশ্বর কি তুষ্ট হন? বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে অন্তরের পবিত্রতা অধিক মূল্যবান—আত্মশুদ্ধি ও সহমর্মিতাই প্রকৃত পূজা। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কুরবানী; শ্লোক - ৫০৩


কূপমণ্ডূকের সমুদ্রযাত্রা; শ্লোক - ৫০২

কূয়োর ব্যাঙ সাগরে আসে; 
সাগরের সুখ খায় নোনা জলে ভাসে। 
কূয়োর জ্ঞানে সাগরকে মাপে; 
অথৈই সুখে সর্দিগর্মি, খুশখুশ কাশে। 

পাদটীকা: কোন কোন স্বল্পজ্ঞানী ব্যক্তি ক্ষূদ্রগন্ডি পেরিয়ে যখন সৌভাগ্যক্রমে আপন যোগ্যতার চেয়ে বৃহত্তরগন্ডিতে পদার্পণ করে, তখন সে আনন্দে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বৃহত্তরগন্ডি সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানী হয়েও, যখন সে নিজেকে বিজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে, তখন সে মূলত আপন অজ্ঞতা এবং বৃহত্তরগন্ডিতে নিজেকে অযোগ্য হিসেবেই প্রকাশ করে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কূপমণ্ডূকের সাগরযাত্রা; শ্লোক - ৫০২


ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯

বিজ্ঞান দিবে সমাধা, ত্রাণ
শত্রু অদৃশ্যমান।
ঈশ্বর নয়, মানুষ আনবে
সুদিন, সমাধান।

পাদটীকা: বর্তমান বিশ্বের সকলেই এক কঠিন সময় পার করছে। বর্তমানে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় বিষয়। করোনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কোনো অদৃশ্য সত্তা নয় রক্ত মাংসের মানুষেরাই আবিষ্কার করেছে, শিগ্রই সুদিন আসবে। কারণ, অদৃশ্য কোনো ঈশ্বর নয়, বরং মানুষ ও তার বিজ্ঞানই সংকটের প্রকৃত সমাধান আনতে সক্ষম। অদৃশ্য শত্রু—হোক তা ভাইরাস, দূষণ, বা অজ্ঞানতা—এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানই হাতিয়ার। এখানে ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস নয়, বরং অন্ধ বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা—যেখানে সুদিন আসে মানুষ ও মননের হাত ধরে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯


দৃঢ়তা; শ্লোক - ৫০০

যে বিশ্বাস ঠুনকো কথায় ভেঙ্গে যায়
তা ভেঙ্গে যাওয়াই ভালো।
যে প্রদীপ ঝড়ো বাতাসে টিকে থাকে
মনে এমন প্রদীপ জ্বালো।

পাদটীকা: যা ভঙ্গুর তা ভেঙে যাবে এটাই স্বাভাবিক, আর যা কিছু মজবুত তাই টিকে থাকবে। যে বিশ্বাস সামান্য কথায় ভেঙে যায়, তা প্রকৃতপক্ষে শক্ত নয়—তার টিকে থাকাও অনর্থক। বরং যে আলো ঝড়ো বাতাসেও নির্বাপিত হয় না, সেই আলোই সত্য, সেই বিশ্বাসই স্থায়ী। সম্পর্ক, আস্থা ও আত্মবিশ্বাস গড়তে হলে চাই মজবুত ভিত; এবং মনেও এমন এক দীপ্তি জ্বালাতে হবে, যা প্রতিকূল সময়েও নেভে না। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


দৃঢ়তা; শ্লোক - ৫০০


সুন্দর সত্তা; শ্লোক - ৪৯৮

কেউ দেখিতে সুন্দর
এর অর্থ এই নয় যে সে সুন্দর মানুষ।
সুন্দর হলো সেই গুণ
যা প্রকাশ করে ব্যক্তির কর্ম জ্ঞান-হুস।

পাদটীকা: বাহ্যিক সৌন্দর্য ব্যক্তির বাহ্যিক অংশে দৃশ্যমান যা আমরা চক্ষু দ্বারা উপলব্ধ করি, এই রূপ ব্যক্তির অন্তর্নিহিত স্বত্তাকে সর্বদা প্রতিনিধিত্ব করে না। চোখে দেখার মতো সুন্দর হলেই কেউ প্রকৃত অর্থে “সুন্দর মানুষ” হয় না।সৌন্দর্য এক গুণ, যা বাইরের চাকচিক্যে নয়, বরং মানুষের ব্যবহার, চিন্তা ও কার্যকলাপে প্রতিফলিত হয়। সত্যিকারের সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয় তার চরিত্র, জ্ঞান, অনুভূতি ও কর্মের মাধ্যমে। ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ব্যক্তির আচরণে প্রকাশ পায়। বাহ্যিকতা নয়, বরং আভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

সুন্দর সত্তা; শ্লোক - ৪৯৮


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭

ধার্মিকের অভিযোগ, “ধর্মীয় বিশ্বাস
হয়েছে আহত, ধর্মাবতার হয়েছে নত”।
ধর্ম মতে, “দৃঢ় বিশ্বাসী স্বর্গ লোকে;
নরকে যাবে, দুর্বল বিশ্বাসী আছে যত”।

পাদটীকা: একটি বিশেষ শ্রেণির ধার্মিক প্রায়শই অভিযোগ করে—তাদের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয়েছে, ধর্মাবতারকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ। অথচ ধর্ম নিজেই বলে—দৃঢ় বিশ্বাসীই স্বর্গের যোগ্য, আর দুর্বল বিশ্বাসী নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: বিশ্বাস কি এতটাই দুর্বল যে সামান্য প্রশ্ন বা মতভেদেই তা ভেঙে পড়ে? নরক ও স্বর্গের চাবিকাঠি-ই বা কার হাতে?

এই ভাবনাগুলো এক গভীর ব্যঙ্গচিন্তার জন্ম দেয়—ধর্ম নয়, সংকটে পড়েছে মানুষের মনোভাব ও একচেটিয়া অধিকারবোধ। কারণ, যা সত্যিকারে দৃঢ়—তা হাজারো প্রশ্নেও নত হয় না; আর যা ঠুনকো, তা সামান্য স্পর্শেই আহত হয়। যদি কোনো ধার্মিক তার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন, তবে ধরে নেওয়া যায়—ঈশ্বরপ্রদত্ত ঈমানের পরীক্ষাতেও তিনি ব্যর্থ হবেন, কারণ তার বিশ্বাস মজবুত নয়, কেবল আবেগনির্ভর। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭


ভাঙ্গনের ধারা; শ্লোক - ৪৯৬

নদীর স্রোতে ভাঙ্গে
বসত ভিটা জমি ঘর।
স্বার্থে সম্পর্ক ভাঙ্গে
স্বজন হয়ে যায় পর।

পাদটীকা: নদীর স্রোত যেমন ভাসিয়ে নিয়ে যায় বসতভিটা, জমি ও ঘর, তেমনি আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থ মানুষকে সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত করে, আপনজনকেও পর করে তোলে। ভাঙন শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, মানসিক ও সম্পর্কগত বিপর্যয়ও সমানতর যন্ত্রণাদায়ক। বসতভিটা হারালে ঘর আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের জায়গায় হৃদয়ের পুনর্গঠন সহজ নয়।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য যে—কিছুই অকারণে ভাঙে না বা গড়ে ওঠে না। প্রতিটি ভাঙন বা পরিবর্তনের পেছনে থাকে গভীরতর কারণ, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য। সেই কারণগুলো অনুধাবন করাই জীবন ও সম্পর্কের পাঠ। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ভাঙ্গনের ধারা; শ্লোক - ৪৯৬


জ্যোতিষী; শ্লোক - ৪৯২

যে জন জ্যোতিষী আপন ভাগ্য
নির্ণয় করিতে নাহি জানে।
জ্যোতিষী তাহার পদবী হলেও,
বিজ্ঞ জনে তাকে না মানে।

পাদটীকা: যে জ্যোতিষী আপন ভাগ্যের নির্ণয় বা পরিবর্তন করতে জানে না, সাধারণত তার করা ভাগ্য পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ বাণীতে কোন বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন লোক বিশ্বাস করে না।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

জ্যোতিষী; শ্লোক - ৪৯২


বিশ্বাস ঘাতক; শ্লোক - ৪৯০

ইতিহাসে যত পতন হয়েছে
কারণ নিকটের আপন।
বিশ্বাস ঘাতক সেই জন হবে
যাহার প্রতি বিশ্বাস ঘন।

পাদটীকা: ঐতিহাসিক ঘটনা সমূহের আলোকে এই কথা জোর গলায় বলা যায় যে, আপন জনদের বিশ্বাস ঘাতকতার কারণে অনেক শাসক এবং সম্রাজ্যের পতন ঘটেছে, তাই কাউকে মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বাস করা উচিত নয়।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বিশ্বাস ঘাতক; শ্লোক - ৪৯০


বিজ্ঞান বনাম ধর্ম; শ্লোক - ৪৮৯

ধর্ম শেখায় অন্ধ বিশ্বাস,
করে অন্ধ বিশ্বাসে মন নিমজ্জন।
বিজ্ঞান দেখায় শেখায়,
বিজ্ঞান জ্ঞানে আলোকিত মন।

পাদটীকা: জ্ঞানে বা অজ্ঞানে কেউ বিজ্ঞানকে অস্বীকার বা বিজ্ঞানের অবদানকে অস্বীকার করলে বিজ্ঞানীরা কখনোই বিজ্ঞান অবমাননার অভিযোগ আনবে না। অপর পক্ষে ধর্মের কোন অযৌক্তিক দ্বাবী এবং বর্ণনাকে অসত্য বললে ধার্মীকেরা ধর্মাদ্রোহীতার অভিযোগ আনে। বিজ্ঞান ধর্মাপেক্ষা উত্তম, উদার এবং বিশাল।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বিজ্ঞান বনাম ধর্ম; শ্লোক - ৪৮৯


দংশন; শ্লোক - ৪৮৮

ভাবিয়া বুঝিয়া বিশ্বাস করি;
আপন দন্ত জিহব্বাকে দংশে।
অতি বিশ্বাসে ঘাতক জন্মে,
আপন রক্তে, আপন বংশে।

পাদটীকা: কাউকে হুট্ করে আপন ভেবে বিশ্বাস করা উচিত নয়। আপন দাঁত যেমন আপন জিহ্বাকে কামড় দেয় অনুরূপ, আপন জন ভাবা ব্যক্তিরাই বিশ্বাস ঘাতক হয়।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দংশন; শ্লোক - ৪৮৮ 488


রাখাল ও বাঘ; শ্লোক - ৪৮৭

রাখালের বাঘ বাঘ চিৎকারে
গ্রামবাসী ছুটে আসে রাখাল অট্ট হাসে।
একদা সত্যিকারে বাঘ আসে,
লোকেরা না দেয় সারা, না দাড়ায় পাশে।

পাদটীকা: ঈশপের রূপকথার সেই রাখাল ও বাঘের গল্পের শেষ পরিণতিতে কেউ রাখালের পাশে দাঁড়ায় নি। তবে বাস্তবের রাখালেরা অনেক বুদ্ধিমান এবং সংঘবদ্ধ, তারা নাটক এমনভাবে সাজায়, কেউ কেউ সত্যি ভেবে সারা দেয়, আর কেউ কেউ সাজানো নাটক জানার পরেও রাখালের ডাকে সারা দিতে বাধ্য হয়; নিছক মজার জন্য নয়, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য রাখালেরা এমনটা করে থাকে। 
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

রাখাল ও বাঘ; শ্লোক - ৪৮৭ 487


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন