কূপমণ্ডূকের সমুদ্রযাত্রা; শ্লোক - ৫০২

কূয়োর ব্যাঙ সাগরে আসে; 
সাগরের সুখ খায় নোনা জলে ভাসে। 
কূয়োর জ্ঞানে সাগরকে মাপে; 
অথৈই সুখে সর্দিগর্মি, খুশখুশ কাশে। 

পাদটীকা: কোন কোন স্বল্পজ্ঞানী ব্যক্তি ক্ষূদ্রগন্ডি পেরিয়ে যখন সৌভাগ্যক্রমে আপন যোগ্যতার চেয়ে বৃহত্তরগন্ডিতে পদার্পণ করে, তখন সে আনন্দে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বৃহত্তরগন্ডি সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানী হয়েও, যখন সে নিজেকে বিজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে, তখন সে মূলত আপন অজ্ঞতা এবং বৃহত্তরগন্ডিতে নিজেকে অযোগ্য হিসেবেই প্রকাশ করে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কূপমণ্ডূকের সাগরযাত্রা; শ্লোক - ৫০২


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭

ধার্মিকের অভিযোগ, “ধর্মীয় বিশ্বাস
হয়েছে আহত, ধর্মাবতার হয়েছে নত”।
ধর্ম মতে, “দৃঢ় বিশ্বাসী স্বর্গ লোকে;
নরকে যাবে, দুর্বল বিশ্বাসী আছে যত”।

পাদটীকা: একটি বিশেষ শ্রেণির ধার্মিক প্রায়শই অভিযোগ করে—তাদের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয়েছে, ধর্মাবতারকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ। অথচ ধর্ম নিজেই বলে—দৃঢ় বিশ্বাসীই স্বর্গের যোগ্য, আর দুর্বল বিশ্বাসী নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: বিশ্বাস কি এতটাই দুর্বল যে সামান্য প্রশ্ন বা মতভেদেই তা ভেঙে পড়ে? নরক ও স্বর্গের চাবিকাঠি-ই বা কার হাতে?

এই ভাবনাগুলো এক গভীর ব্যঙ্গচিন্তার জন্ম দেয়—ধর্ম নয়, সংকটে পড়েছে মানুষের মনোভাব ও একচেটিয়া অধিকারবোধ। কারণ, যা সত্যিকারে দৃঢ়—তা হাজারো প্রশ্নেও নত হয় না; আর যা ঠুনকো, তা সামান্য স্পর্শেই আহত হয়। যদি কোনো ধার্মিক তার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন, তবে ধরে নেওয়া যায়—ঈশ্বরপ্রদত্ত ঈমানের পরীক্ষাতেও তিনি ব্যর্থ হবেন, কারণ তার বিশ্বাস মজবুত নয়, কেবল আবেগনির্ভর। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭


রাখাল ও বাঘ; শ্লোক - ৪৮৭

রাখালের বাঘ বাঘ চিৎকারে
গ্রামবাসী ছুটে আসে রাখাল অট্ট হাসে।
একদা সত্যিকারে বাঘ আসে,
লোকেরা না দেয় সারা, না দাড়ায় পাশে।

পাদটীকা: ঈশপের রূপকথার সেই রাখাল ও বাঘের গল্পের শেষ পরিণতিতে কেউ রাখালের পাশে দাঁড়ায় নি। তবে বাস্তবের রাখালেরা অনেক বুদ্ধিমান এবং সংঘবদ্ধ, তারা নাটক এমনভাবে সাজায়, কেউ কেউ সত্যি ভেবে সারা দেয়, আর কেউ কেউ সাজানো নাটক জানার পরেও রাখালের ডাকে সারা দিতে বাধ্য হয়; নিছক মজার জন্য নয়, নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য রাখালেরা এমনটা করে থাকে। 
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

রাখাল ও বাঘ; শ্লোক - ৪৮৭ 487


দেশপ্রেম নমুনা; শ্লোক - ৪৮০

রাজার মনে স্বদেশ প্রেম নাই
ভরসা নাই দেশের পণ্য, সেবা, মানে।
রেকর্ড বাঁজায়, আয়েশ করে,
জনগণকে ভুলোয় দেশ প্রেমের গানে।

পাদটীকা: সেই রাষ্ট্রপক্ষ প্রকৃতার্থেই দেশপ্রেমী যারা আপন দেশের পণ্য এবং সেবায় ভরসা করে, এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করা থেকে বিরত থাকে। লোক দেখানো দেশ প্রেমের বুলি আওরানোর পরিবর্তে, যথার্থ কর্মে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়ে জনগণকে স্বদেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দেশপ্রেম নমুনা; শ্লোক - ৪৮০

বঙ্গদেশ; শ্লোক - ৪৭৫

বঙ্গ দেশে, 
চোরের হাতে হাতকড়া পড়াইবে যে,
রঙ্গ হেসে, 
সাধুর সে হাত চোরে বাধিয়া রাখে।

পাদটীকা: যে সমাজে ন্যায় বিচারকের তুলনায় দুর্নীতিবানেরা ক্ষমতাবান, সে সমাজ অসতের রঙ্গমঞ্চ। সততা সেখানে সংখ্যালঘু। মানুষ সে সমাজে অসহায়, নীরবে নিভৃতে কাঁদে ন্যায় বিচারের বানী।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বঙ্গদেশ; শ্লোক - ৪৭৫


তিন বাঙাল; শ্লোক - ৪৬১

যদি থাকে তিন বাঙাল;
এক জন এ দলে, অন্য জন ও দলে।
তৃতীয় জন সুবিধাবাদী
সুবিধার আশ্বাস পেলেই নামে জলে।

পাদটীকা: শুরু থেকেই বাঙালদের মাঝে সাম্যের অভাব, বিভক্ত বংশ পদবীতে, বিভক্ত বিশ্বাসের বিষে, এপার-ওপারে বিভক্তির শেষে বিভক্ত ভিন্ন নাগরিকত্বে। এর মাঝে এক শ্রেণী সুবিধাবাদী, যেখানে স্বার্থের মুলা, সেখানেই পাতে কুলা। বাঙাল কেবল মাত্র তখনই এক ছাতার নীচে অবস্থান করে যখন কোন অবাঙালী শিলা বৃষ্টি নিক্ষেপ করে, এরপর পুনরায় যে যার অবস্থানে।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

তিন বাঙাল; শ্লোক - ৪৬১



বাঙাল চরিত্র; শ্লোক - ৪৬০

বাঙাল বোঝে কম
বলে বেশি।
মগজ খাটায় কম
শক্ত পেশী। 

পাদটীকা: কোন কোন ব্যক্তি বিষয়বস্তু না বুঝেই কথা বলে এবং বুদ্ধিহীনতার পরিচয় দেয়, অপর পক্ষে গায়ের জোড়েই নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দাবি করে।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বাঙাল চরিত্র; শ্লোক - ৪৬০

বাঙাল জন্ম; শ্লোক - ৪৫৯

বাঙাল হয়ে না জন্মালে জানা হতো না
বাঙাল বড়ই নির্বোধ জাতি!
জ্ঞানী সংখ্যালঘু; জননেতা মাথা মোটা
চামচারা ফুলায় বুকের ছাতি।

পাদটীকা: বাঙাল হিসেবে গর্ব করার মত যেমন অনেক বিষয় আছে, তেমনি আমাদের অনুতাপের তালিকাটাও বেশ লম্বা। এখানে বাঙাল জ্ঞানী গুণী জনেরা সংখ্যালঘু, আর নির্বোধেরা সংখ্যাগুরু। এই সংখাগুরুদের নিয়ন্ত্রণ করেই রাজনীতির খেলা চলে।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বাঙাল; শ্লোক - ৪৫৯


মিনি কাব্য - ৩১৭

মিনি কাব্য - ৩১৭
আরিফুর রহমান
-----------------
আমি যে কোন কথাকে
দিতে পারি কাব্যে রূপ।
এই যেমন মাত্রই লিখলাম
তার উদাহরণ স্বরূপ।

মিনি কাব্য - ১৮৫

মিনি কাব্য
আরিফুর রহমান
-----------------
দাঁত থাকিতে দাঁতের যত্ন করি না,
ইহাই মোদের বাঙালীয়ানা।
অযত্নে অবহেলায় দন্ত যদি হারাই,
হই আফসোসে তালকানা।

মিনি কাব্য - ১৭১

মিনি কাব্য
আরিফুর রহমান
-----------------
হাজার ইঁদুর খেয়ে
বিড়াল চললো হজ করতে।
ফিরে টুপি জুব্বা গায়
বিড়াল ধর্মের গীত গায়।

ভুলোময়; শ্লোক - ৫৭

মন ভুলে ভুলে ভুলোময়,
ভুলে ভরা জীবন তাঁর। 
এক দৃষ্টে জ্ঞানী, অন্য দৃষ্টে
ভুল করেই সময় পার।

পাদটীকা: কোনো কোন ব্যক্তি ভুল করে করে শেখে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবন পথ অতিক্রম করে। কোনো কোন দৃষ্টিকোণ এমন ব্যক্তিকে জ্ঞানী ভাবে যে ভুল করে শেখে, অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু তার ভুলগুলো দেখে। 
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


চুরির রকমফের; শ্লোক - ৫৫

কেউ করে পুকুর চুরি 
কেউ করে ছবি।
কেউ লেখা চুরি করে
হয় লেখক-কবি।

পাদটীকা: সমাজের নানা স্তরে চুরির বহুমাত্রিক রূপ রয়েছে। কেউ করে সম্পদের—যেমন পুকুর চুরি, কেউ শিল্পের—যেমন চিত্রকলার। তবে সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও দুর্ভাগ্যজনক হলো চিন্তার চুরি—যেখানে অন্যের লেখা নকল করে কেউ নিজেকে লেখক বা কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। সৃষ্টিশীলতার সম্মান রক্ষা করা একান্ত জরুরি, আর চুরি কোনো ক্ষেত্রেই গৌরবের বিষয় নয়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

চুরির রকমফের; শ্লোক - ৫৫


পণ্য; শ্লোক - ৪১

কেউ বেচে আলু পটল
কেউ গায়ের ঘাম শ্রম কর্ম।
কাঠ মোল্লার কিচ্ছু নাই
বেচে কুরআন হাদিস ধর্ম।

পাদটীকা: মানুষ পণ্য বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করে এবং জীবিকা নির্বাহ করে। পণ্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে, কারোর কাছে পণ্য হলো সময়, শ্রম, সেবা, সম্পদ বা উৎপাদিত কোন বস্তু। সমাজে একশ্রেণীর মানুষ আছেন যারা ধর্মকে পণ্য হিসেবে উপজীব্য করে চলে।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

পণ্য; শ্লোক -৪১



দান; শ্লোক - ৩৯

সম্মান যেথা ভূমিহীন 
প্রেম সেথা অর্থহীন। 
সঠিক পাত্রে হোক 
দান অর্থ প্রেম দয়া দ্বীন। 

পাদটীকা: যে পাত্রে ভালোবাসা বা সম্মান প্রদর্শনের প্রতিদানে অবহেলা বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতা মেলে, সে পাত্রে ভালোবাসা বা সম্মান প্রদর্শন অহেতুক। যে পাত্র যথা বস্তু বা মূল্যবোধের যথার্থ মূল্যায়ন করে সে পাত্রে যথা দান স্বার্থক।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দান; শ্লোক - ৩৯


ধর্মগুরু; শ্লোক - ১১

ধর্মগুরু জাহির করে, সে
আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞার আধার।
আম জনতায় মূর্খ মানব
কেহ নাই আর তার সমতার।

পাদটীকা: কোন কোন ধর্মগুরু, ধর্মীয় জলসায় বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজেকে বিজ্ঞ এবং মহাজ্ঞানী হিসেবে জাহির করে, অনেক মিথ্যা এবং আজগুবি প্রসঙ্গের অবতারণা করে। ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে বিশেষ্যায়িত করতে গিয়ে স্বয়ং ধর্মীয় বিষয়বস্তুকে খাটো করে লোক হাসায়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধর্মগুরু; শ্লোক - ১১


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন