বাঙাল বিবর্তণ; শ্লোক - ৫২০

লাল চায়ে যদি মেশাও দুধ,
পরিচয় বদলে তা হয় দুধ চা।
বাঙাল হিন্দু বৌদ্ধ মুসলিম,
এক উপকরণ যোগ ভিন্নতা।

পাদটীকা: ভারত উপমহাদেশের জনগণ সংকর জাতির, সংকর ভাষাভাষী এবং সংস্কৃতির। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে এদের পরিচয় ভিন্ন, তবে জাতিগত পরিচয়ে এরা সকলেই এক। বাঙালি হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম বা যেকোনো ধর্মের মানুষ—সবাই মূলত একই মানবজাতির অংশ। ভিন্নতা বিভাজনের নয়; বরং তা মিলনের পথ দেখাতে পারে, যদি আমরা মূল মানবিকতা ও সহাবস্থানের মন্ত্রটি হৃদয়ে ধারণ করি। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


বাঙাল বিবর্তণ; শ্লোক - ৫২০


অপ্রশ্রয়ের শিক্ষা; শ্লোক - ৫১৯

মানুষকে অতি প্রশ্রয় দিলে,
যদাচার করে, ওঠে ঘাড়ে।
যোগ‍্য অতি নমনীয় হলে,
অযোগ্য লোকের দাপট বাড়ে।

পাদটীকা: অতিরিক্ত সহনশীলতা ও প্রশ্রয়ের নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে। যখন কাউকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দেওয়া হয়, তখন সে নিজের সীমা ভুলে যায় এবং অপব্যবহার করতে থাকে—ঘাড়ে চেপে বসে। তেমনি, যখন একজন যোগ্য ব্যক্তি বিনয়ী ও নমনীয় থাকে, তখন অনেক সময় অযোগ্য ও দাম্ভিক ব্যক্তিরা দাপট দেখাতে শুরু করে। নম্রতা ও সহনশীলতার মাঝেও যথাসময়ে দৃঢ়তা ও সীমা নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে যোগ্যতা অপমানিত না হয় এবং অন্যায় প্রশ্রয় পেয়ে মাথাচাড়া না দিতে পারে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অপ্রশ্রয়ের শিক্ষা; শ্লোক - ৫১৯


ধর্মান্ধতা ও মানবিক বিপর্যয়; শ্লোক - ৫১৮

ধর্মান্ধের সমাজে,
ভিন্ন ধর্মী অনিরাপদ।
ধর্মান্ধের ধর্ম পদ,
মানুষের জন্য বিপদ।

পাদটীকা: ধর্মান্ধতার ফলে সমাজে মানবিক সংকট তৈরী হয়। যেখানে ধর্মের অপব্যাখ্যা ও একচেটিয়া দখলদারিত্ব চলে, সেখানে ভিন্নধর্মী বা মতের মানুষ অনিরাপদ হয়ে ওঠে। ধর্মান্ধরা যে ধর্মের পতাকা তুলে ধরে, সেটি আসলে মানুষের শান্তি ও কল্যাণের পথে নয়—বরং বিপদের বার্তা হয়ে দাঁড়ায়। ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য শান্তি, সহনশীলতা ও মানবকল্যাণ হলেও, ধর্মান্ধরা তা বিকৃত করে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও হিংসার সৃষ্টি করে। যে সমাজে যুক্তিবোধ ও মানবতা অনুপস্থিত, সেখানে ধর্ম নয়, ধর্মান্ধতাই বড় বিপদ হয়ে দাঁড়ায়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধর্মান্ধতা ও মানবিক বিপর্যয়; শ্লোক - ৫১৮


মানুষের বিকাশগাথা; শ্লোক - ৫১৭

মানুষ বাড়ে গাছের মত,
চারাগাছ হয় বিশাল বড়; 
সময়ের সাথে যোগ্যতায় 
বিশাল থেকে বিশালতর।

পাদটীকা: মানুষের বিকাশ ও সম্ভাবনার রূপক তুলনা। যেমন একটি ছোট চারাগাছ ধীরে ধীরে সময়, পরিচর্যা ও অনুকূল পরিবেশে বড় হয়ে ছায়াদানকারী বিশাল বৃক্ষে পরিণত হয়, তেমনি একজন মানুষও নিজের মেধা, পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ক্রমশ উন্নতি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি তার যোগ্যতা ও মানবিক গুণাবলি বিকশিত হয়, তবে সে শুধু বড় মানুষ নয়, মহান মানুষ হয়ে উঠতে পারে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে। 

মানুষের বিকাশগাথা; শ্লোক - ৫১৭

বাস্তববাদী জীবনদর্শন; শ্লোক - ৫১৬

জীবন সত্য, জীবন চরম;
স্বর্গ, নরক, পরকাল ভ্রম।
বাঁচার মত বাঁচো মানুষ; 
যতক্ষণ দেহে আছে দম।

পাদটীকা: বাস্তববাদী জীবনদর্শন। জীবনই চরম সত্য—যা আমরা এখন বাঁচছি, সেটিই বাস্তব। স্বর্গ, নরক, পরকাল এসব ধারণা মূলত বিশ্বাসের বশবর্তী, যার অস্তিত্ব নিয়েও নানা মতভেদ আছে। তাই ভবিষ্যতের অনিশ্চিত ভ্রমের পিছনে না ছুটে, যতক্ষণ প্রাণ আছে, ততক্ষণ মানুষের মতো করে সচেতনভাবে, সাহসের সঙ্গে জীবনকে উপভোগ করতে শেখাই শ্রেয়। জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ থেকে বর্তমানেই বাঁচো, ভালো থেকো, ভালো রাখো। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বাস্তববাদী জীবনদর্শন; শ্লোক - ৫১৬


করুণা ও সম্মান; শ্লোক - ৫১৫

কাঙ্গালকে সবে করুণা করে,
নাহি করে সম্মান।
যোগ্য কাজে সম্মান মেলে,
বাড়ে গুণীর মান। 

পাদটীকা: দান-করুণা ও প্রকৃত সম্মানের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। সমাজ প্রায়শই দরিদ্রকে করুণা করে, কিন্তু তাতে থাকে না মর্যাদা বা সম্মানের অনুভব। সম্মান তখনই আসে, যখন কেউ যোগ্যতা, মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কিছু অর্জন করে। সহানুভূতি ভালো, তবে প্রকৃত সম্মান কেবল গুণ, নৈতিকতা ও কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

করুণা ও সম্মান; শ্লোক - ৫১৫

রূপান্তরের আশ্বাস; শ্লোক - ৫১৪

কঠিন বরফ গলে যায়,
হয়ে যায় তরল।
কঠিন অংক চর্চা করো
হয়ে যাবে সরল।

পাদটীকা: সময়ের সাথে ধৈর্যশীল হয়ে অধ্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ। যেমন কঠিন বরফ সময় ও উত্তাপে গলে গিয়ে তরলে রূপ নেয়, তেমনি জটিল অংক বা সমস্যাও ধীরে ধীরে মনোযোগ ও চেষ্টায় সহজ হয়ে ওঠে। কোনো কিছুই স্থায়ীভাবে কঠিন নয়; সময়, অধ্যবসায় ও মনোযোগ থাকলে জটিলতা সরলতায় রূপ নিতে বাধ্য। জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতেও হতাশ না হয়ে ধৈর্য ধরে চেষ্টা করলে কঠিনতম কাজও সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

রূপান্তরের আশ্বাস; শ্লোক - ৫১৪


সময়ের গতি; শ্লোক - ৫১৩

সময় বয়ে যায়
বয়ে যায় বেলা।
একদা হবে শেষ
জগতের খেলা।

পাদটীকা: সময়ের অনিবার্য গতি এবং জীবনের ক্ষণস্থায়ীতার উপলব্ধি। সময় ও বেলা যেন অবিরাম স্রোতের মতো বয়ে চলে—নিরবধি, অপ্রতিরোধ্য। আর সেই স্রোতেরই একপ্রান্তে অপেক্ষা করে অন্তিম মুহূর্ত, যেখানে একদিন শেষ হয়ে যাবে পৃথিবীর সব কোলাহল, প্রতিযোগিতা ও মায়ার খেলা। জীবন অনিত্য, আর এই অনিত্যতার মাঝেই লুকিয়ে আছে জীবনের প্রকৃত তাৎপর্য। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

সময়ের গতি; শ্লোক - ৫১৩

দ্বৈতচরিত্র; শ্লোক - ৫১২

যে যায় লঙ্কায়,
সেই হয় রাবণ।
রক্ষক হয়ে সে,
ধ্বংস করে বন।

পাদটীকা: ক্ষমতা ও লোভের দ্বৈতচরিত্র। “যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ”—অর্থাৎ কেউ যখন ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছে যায়, তখন সে নিজেই রাবণের মতো অহংকারী ও অত্যাচারী হয়ে ওঠে। আর “রক্ষক হয়ে সে, ধ্বংস করে বন”—অর্থাৎ, যাদের দায়িত্ব রক্ষা করার, অনেক সময় তারাই লোভ, স্বার্থ বা ক্ষমতার কারণে সর্বনাশের কারণ হয়ে ওঠে। প্রকৃতি মানুষকে ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করে—যদি নৈতিকতা না থাকে, রক্ষকও ধ্বংসকারী হয়ে ওঠে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দ্বৈতচরিত্র; শ্লোক - ৫১২


ধর্মীয় প্রভাব; শ্লোক - ৫১১

গো দুগ্ধ অপচয় করে,
গো মূত্র করে পান।
ধর্মের প্রভাবে মানুষ,
সন্ত্রাস বা বোহেমিয়ান।

পাদটীকা: ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অন্ধ বিশ্বাসের এক তীব্র সমালোচনা। মানুষ যখন যুক্তি ও মানবিকতা ভুলে কেবল ধর্মীয় মোড়কে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন সে এমন কাজ করে যা বিবেকবুদ্ধির পরিপন্থী—যেমন পুষ্টিকর গরুর দুধ অপচয় করা, অথচ গরুর মূত্রকে ওষুধ বা পূজার উপকরণ হিসেবে পান করা। এই প্রবণতা কখনো সন্ত্রাসে, আবার কখনো অদ্ভুত বোহেমিয়ান জীবনধারায় রূপ নিতে পারে। যুক্তিবাদী ও মানবিক ধর্মচর্চার গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে মূলে থাকবে জ্ঞান, দয়া ও সাম্য। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।



অতিরিক্ততা; শ্লোক - ৫১০

অতি লোভে হয়
তাঁতি নষ্ট।
অতি আলোতে
হয় পথভ্রষ্ট।

পাদটীকা: জীবনের ভারসাম্যের গুরুত্ব রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। “অতি লোভে তাঁতি নষ্ট”—মানে হলো, সীমাহীন লোভ একজন দক্ষ ব্যক্তিকেও পতনের পথে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক তেমনি, “অতি আলোতে হয় পথভ্রষ্ট”—অতিরিক্ত জ্ঞান বা নির্দেশনার চাপেও মানুষ দিশেহারা হতে পারে, যেমন অতিরিক্ত আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। জীবনের যেকোনো বিষয়ে অতিরিক্ততা ক্ষতিকর। পরিমিতি বোধ ও সংযমই প্রকৃত প্রজ্ঞার পরিচয়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অতিরিক্ততা; শ্লোক - ৫১০


অহেতুক; শ্লোক - ৫০৯

না জেনে চাপার জোড়ে হুজুরগিরি হয়, 
পান্ডিত্য নয়। 
মুর্খের সাথে জ্ঞান-বিজ্ঞান তর্ক-বিতর্ক, 
সময় অপচয়। 
 
পাদটীকা: জোরে কথা বললেই কেউ জ্ঞানী হয় না। অনেক সময় মানুষ না জেনেও উচ্চস্বরে কথা বলে বা কথার দাপটে নিজেকে ‘হুজুর’ বা পণ্ডিত প্রমাণ করতে চায়। কিন্তু প্রকৃত পাণ্ডিত্য আসে বিনয়, যুক্তি ও সত্যজ্ঞান থেকে। পাশাপাশি, যারা জ্ঞানের আলো থেকে দূরে থেকে যুক্তিহীন বিতর্কে লিপ্ত থাকে, তাদের সঙ্গে তর্ক করা একান্তই সময়ের অপচয়। জ্ঞানচর্চার প্রকৃত মানসিকতা ও আলোচনার সঠিক পরিবেশ থাকা সবার জন্য জরুরি। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অহেতুক; শ্লোক - ৫০৯


নমকহারাম; শ্লোক - ৫০৮

নমক খাওয়াইবে যত করে 
নমকহারাম বাড়িবে তত হারে। 
উপকার করিবে যত করে 
অকৃতজ্ঞ বাড়িবে তত হারে। 
 
পাদটীকা: যত বেশি কারো উপকার করা হয়, ততই বাড়তে পারে অকৃতজ্ঞতার পরিমাণ। যেমন কাউকে আহার করালে বা সাহায্য করলে প্রত্যাশিত কৃতজ্ঞতা সবসময় মেলে না—বরং অনেক সময় সেই মানুষটিই হয়ে ওঠে অকৃতজ্ঞ বা ‘নমকহারাম’। উপকার করা মহত্ত্বের লক্ষণ হলেও প্রত্যাশা না রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ কৃতজ্ঞতা একটি বিরল গুণ, যা সবার মধ্যে থাকে না।  - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

নমকহারাম; শ্লোক - ৫০৮


হারামখোর; শ্লোক - ৫০৭

চুরি করে খায় খাদ্য 
চোরে চুরি করে পানীয়। 
হারাম খাদ্য ছুই না 
হালাল পেলে জানিয়ো। 

পাদটীকা: কোন কোন মানুষ দ্বৈত নীতি নিয়ে চলে। জনসমক্ষে নিজেকে ধার্মিক হিসেবে জাহির করে, হালাল খাই হালাল খাই বলে চিল্লায়। পক্ষান্তরে, গোপনে অন্যায় পন্থা অবলম্বন করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ ধরণের ব্যক্তি মোটেও ধার্মীক নয়, নিজের কূপ্রবৃত্তি সমূহ ঢাকার জন্য ধর্মের বুলি আওরায় এবং ধর্মীয় লেবাস ধারণ করে। এই শ্রেণীর ব্যক্তি যে ধর্মকে প্রতিনিধিত্ব করে সেই ধর্মের জন্যই এরা ক্ষতিকর, এবং যে সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করে সেই সমাজের জন্যই এরা ক্ষতিকর। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

হারামখোর; শ্লোক - ৫০৭


চোরের বড় গলা; শ্লোক - ৫০৬

চুরি করে খেয়ে খেয়ে 
চোর ধার্মীক সাজে। 
সাধুকে দেয় উপদেশ 
“ভালো হও কাজে”। 

পাদটীকা: প্রবাদ আছে চোরের বড় গলা। বাক্যটি শুধু প্রবাদে নয় বাস্তবেও দেখা যায়। বাস্তবেও কোন কোন চোর বা অসৎ ব্যক্তি, সাধু বা সৎ ব্যক্তিদের পিঠ চাপড়ে “ভালো হয়ে যাও” বলে বড় গলায় উপদেশ দিয়ে থাকে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

চোরের বড় গলা; শ্লোক - ৫০৬


কালের খাঁচা; শ্লোক - ৫০৫

আটকে আছি বর্তমানে ফাঁদে,
ভাবী ভবিষ্যতে ভ্রমে।
আতীত গেছে মুছে; বিভূতিরা
স্মৃতির পাতায় জমে।

পাদটীকা: আমরা সবাই মহাকালের বর্তমান সময়েই বর্তমান। আমরা ঘড়ির কাঁটার মতো ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি আর ভবিষ্যতটাকেও বর্তমানে রূপান্তরিত করছি। বর্তমান অতীতে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বর্তমানকে হারাচ্ছি কালের গর্ভে। কোন কোন বর্তমান অতীতে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি থেকে, আর কোন কোন অতীত ঠাঁই পাচ্ছে চিত্রে ও স্মৃতিতে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কালের খাঁচা; শ্লোক - ৫০৫


প্রতিকূলতার আহ্বান; শ্লোক - ৫০৪

হে প্রাণ, প্রতিকূলতায় লড়ো;
প্রকৃতি যুদ্ধার্থে মাতে, করে আহ্বান।
ভূবনে বিজয়ীরা বিরাজমান;
হও বিজয়ী নয়তো বিলুপ্ত, ম্রিয়মান। 

পাদটীকা: এ পৃথিবী চাষাবাদ যোগ্য জমি তুল্য, আর প্রাণ শস‍্য তুল্য। একই জমিতে ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন শস‍্য ফলে। শস‍্য যদি পরজীবি বা প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তা রোগাক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত বা বিলুপ্ত হয়ে যায়। অনুরূপ সময়ের স্রোতে আপন অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে বহু প্রাণী, উদ্ভিদ, সমাজ, রাষ্ট্র এবং সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একদিন মানুষও বিলুপ্ত হয়ে যাবে যদি সে প্রতিকূলতাকে জয় করে তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

প্রতিকূলতার আহ্বান; শ্লোক - ৫০৪


কুরবানী; শ্লোক - ৫০৩

মনের পশু মনেই রইলো, 
খোদায় নাহি ভয়! 
নিরীহ প্রাণী কুরবানীতে 
খোদা কী তুষ্ঠ হয়? 

পাদটীকা: যে মানুষ মনের পশুত্বকে কুরবানী বা ত্যাগ করে ঈশ্বরকে জয় করতে ব্যর্থ। সেই মানুষের মনের পশুকে জিইয়ে রেখে নিরীহ চতুষ্পদী প্রাণীকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হত্যা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। যে মানুষের মনের পশুত্ব রয়ে যায়, যার মধ্যে করুণা, সহানুভূতি ও খোদাভীতি নেই, সে যদি শুধু রীতির বশে নিরীহ প্রাণী কুরবানী করে, তবে তাতে ঈশ্বর কি তুষ্ট হন? বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে অন্তরের পবিত্রতা অধিক মূল্যবান—আত্মশুদ্ধি ও সহমর্মিতাই প্রকৃত পূজা। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কুরবানী; শ্লোক - ৫০৩


কূপমণ্ডূকের সমুদ্রযাত্রা; শ্লোক - ৫০২

কূয়োর ব্যাঙ সাগরে আসে; 
সাগরের সুখ খায় নোনা জলে ভাসে। 
কূয়োর জ্ঞানে সাগরকে মাপে; 
অথৈই সুখে সর্দিগর্মি, খুশখুশ কাশে। 

পাদটীকা: কোন কোন স্বল্পজ্ঞানী ব্যক্তি ক্ষূদ্রগন্ডি পেরিয়ে যখন সৌভাগ্যক্রমে আপন যোগ্যতার চেয়ে বৃহত্তরগন্ডিতে পদার্পণ করে, তখন সে আনন্দে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বৃহত্তরগন্ডি সম্পর্কে স্বল্প জ্ঞানী হয়েও, যখন সে নিজেকে বিজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করে, তখন সে মূলত আপন অজ্ঞতা এবং বৃহত্তরগন্ডিতে নিজেকে অযোগ্য হিসেবেই প্রকাশ করে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কূপমণ্ডূকের সাগরযাত্রা; শ্লোক - ৫০২


শেষ পরিচয়; শ্লোক - ৫০১

জাতপাত ও ধর্মে 
হানাহানি, বিজয়ী কেহ। 
হৃৎপিন্ড থামিলে 
পরিচয় লাশ, মৃতদেহ। 

পাদটীকা: কোন কোন মানব গোত্র যতক্ষণ জীবিত ততক্ষণ ব্যস্ত পারস্পরিক হানাহানিতে এবং বিচ্ছিন্ন বৈষম্য ভেদ বিভেদে। হৃতপিন্ড যখন থেমে যায়, ফুসফুস নিশ্বাস গ্রহণের ক্ষমতা হারায়, তখন সকলেই সমান, একটাই পরিচয়; লাশ বা মৃতদেহ। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

শেষ পরিচয়; শ্লোক - ৫০১


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন