স্বর্গীয় হাত; শ্লোক - ৩৪২

ধর্ম শালায় ঈশ্বর থাকে না
থাকে জনপদে জঙ্গলে।
ঈশ্বর না বাড়ায় স্বর্গীয় হাত;
মানুষই আসে মঙ্গলে।

পাদটীকা: ঈশ্বর মন্দির বা ধর্মশালার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নন; তিনি বাস করেন মানুষের মধ্যে—জনপদে, জঙ্গলে, প্রকৃতির মাঝে। কারোর বিপদে ঈশ্বর কখনোই অলৌকিক হস্তক্ষেপ করেন না; বরং মানুষের সহানুভূতি, সহায়তা ও মানবিক উদ্যোগই প্রকৃত মঙ্গল আনে। মানবিকতা ধর্মের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

স্বর্গীয় হাত; শ্লোক - ৩৪২


দেবালয়; শ্লোক - ৩৪৭

দেবালয়ে সেই জন যায় যে
দেবের দেখা নাহি পায়।
আপন গৃহে যার ঈশ্বর মেলে
দেবালয়ে সে নাহি যায়।

পাদটীকা: দেবালয় বা ধর্মশালা ঈশ্বরের গৃহ, অপর পক্ষে ধর্ম মতে ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। ঈশ্বর যদি সর্বত্র বিরাজমান হন তাহলে ঈশ্বরের দর্শন আপন গৃহেও পাওয়া উচিত।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ছবি: ফাহরি রামদানি

ঈশ্বর সন্ধান; শ্লোক - ৩৪১

সর্ব ভক্তি সত্য ও ন্যায়ে,
সত্য ও সুন্দর পূজি।
অশরীরি খুঁজি না আমি,
সুমানবে ঈশ্বর খুঁজি।

পাদটীকা: মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ভক্তি ও পূজার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান পায় সত্য, ন্যায় ও সৌন্দর্য। এখানে অদৃশ্য, অশরীরি ঈশ্বরের পরিবর্তে জীবন্ত, সৎ, ও মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরত্ব অনুভূত হয়। এটি সেই দর্শনের প্রতিফলন, যেখানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং মানবিকতা, ন্যায় এবং সত্যনিষ্ঠ জীবনযাপনই হয় চূড়ান্ত আরাধনা। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ঈশ্বর সন্ধান; শ্লোক - ৩৪১


স্রষ্টা চরিত্র; শ্লোক - ১২

মানব আপন স্বার্থেই গড়েছে
ঈশ্বর, খোদা, ভগবান; 
আপন হাতেই লিখেছে কিতাব
তাঁহার নামে জয়গান।

পাদটীকা: ঈশ্বর কখনো মানুষের সামনে এসে তার অস্তিত্ব, মহানুভবতা বা ক্ষমতার কথা জানান দেননি। এবং ঈশ্বরের সকল জয়গান মানুষের তৈরী বর্ণমালা দিয়ে মানুষের হাতেই লেখা। মানুষ প্রাকৃতিকভাবে আশাবাদী প্রাণী, ভরসা করতে ভালোবাসে, তাই সে, স্বীয় জ্ঞানের মাপকাঠি দিয়ে এই কাল্পনিক সত্তাকে সাজায়, এবং ভরসা করে অপ্রাপ্তিগুলো ভুলে থাকে। আবার এই অজ্ঞাত শক্তির ভয় দেখিয়ে অন্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। মোটকথা, ঈশ্বরের ধারণার স্রষ্টা মানুষ স্বয়ং।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

স্রষ্টা চরিত্র; শ্লোক - ১২


ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯

বিজ্ঞান দিবে সমাধা, ত্রাণ
শত্রু অদৃশ্যমান।
ঈশ্বর নয়, মানুষ আনবে
সুদিন, সমাধান।

পাদটীকা: বর্তমান বিশ্বের সকলেই এক কঠিন সময় পার করছে। বর্তমানে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় বিষয়। করোনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কোনো অদৃশ্য সত্তা নয় রক্ত মাংসের মানুষেরাই আবিষ্কার করেছে, শিগ্রই সুদিন আসবে। কারণ, অদৃশ্য কোনো ঈশ্বর নয়, বরং মানুষ ও তার বিজ্ঞানই সংকটের প্রকৃত সমাধান আনতে সক্ষম। অদৃশ্য শত্রু—হোক তা ভাইরাস, দূষণ, বা অজ্ঞানতা—এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানই হাতিয়ার। এখানে ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস নয়, বরং অন্ধ বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা—যেখানে সুদিন আসে মানুষ ও মননের হাত ধরে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯


মিনি কাব্য - ২২২

মিনি কাব্য
আরিফুর রহমান
-----------------
মানুষে গড়েছে ঈশ্বর,
আপন কারণে।
মানুষকে বধিছে মানুষ,
ঈশ্বরের বারণে।

কুরবানী; শ্লোক - ৫০৩

মনের পশু মনেই রইলো, 
খোদায় নাহি ভয়! 
নিরীহ প্রাণী কুরবানীতে 
খোদা কী তুষ্ঠ হয়? 

পাদটীকা: যে মানুষ মনের পশুত্বকে কুরবানী বা ত্যাগ করে ঈশ্বরকে জয় করতে ব্যর্থ। সেই মানুষের মনের পশুকে জিইয়ে রেখে নিরীহ চতুষ্পদী প্রাণীকে ঈশ্বরের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হত্যা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। যে মানুষের মনের পশুত্ব রয়ে যায়, যার মধ্যে করুণা, সহানুভূতি ও খোদাভীতি নেই, সে যদি শুধু রীতির বশে নিরীহ প্রাণী কুরবানী করে, তবে তাতে ঈশ্বর কি তুষ্ট হন? বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতার চেয়ে অন্তরের পবিত্রতা অধিক মূল্যবান—আত্মশুদ্ধি ও সহমর্মিতাই প্রকৃত পূজা। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

কুরবানী; শ্লোক - ৫০৩


সভ্য মানুষ; শ্লোক - ৪৭৬

ধর্ম না বানায় সভ্য মানুষ
যদি না সে নিজে সভ্য হয়।
ধর্মের কল তখনই নড়ে,
যখন মানুষ ধর্মে করে ভয়।

পাদটীকা: ধর্ম মানুষকে তখনই সভ্য বানাতে সক্ষম হয় যখন মানুষ স্বয়ং সভ্য হয়। ঈশ্বর তখনই শক্তিমান, যখন মানুষ ঈশ্বরের শক্তিতে বিশ্বাস করে। 
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

সভ্য মানুষ; শ্লোক - ৪৭৬


ধর্মীয় ভিত্তি; শ্লোক - ৪৯৪

ধরম তোমার ছিনিয়ে নিবে
চিন্তার স্বাধীনতা।
ঈশ্বরের নামে বিশ্বাস করাবে
মানুষের বলা কথা।
 
পাদটীকা: ধর্মের নামে চিন্তার স্বাধীনতা হরণ এবং অন্ধ বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়ার এক প্রখর সমালোচনা। ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, এখানে মানুষের জ্ঞান এবং মুক্ত ভাবনা ভয়ের সীমানায় আবদ্ধ। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা প্রচারক, স্বাধীন চিন্তাকে ছিনিয়ে নিতে চায়— নিজের বোঝাপড়া নয়, বরং তারা ঈশ্বরের নামে বিশ্বাস করাতে চায় এমন কথাগুলো, যা মানুষই তৈরি করেছে। মানুষের বলে যাওয়া কথা সমূহ, ধর্মে ঈশ্বরের কথা হিসেবে বিশ্বাস করানো হয়। ঈশ্বর কি সত্যিই চান, আমরা নিজে না ভেবে কেবল অন্যের মুখে শোনা মত অনুসরণ করি? মানুষের উচিৎ অন্ধভাবে কোন কিছু অনুসরণ না করে, বরং যুক্তিবোধ, চিন্তা ও মানবিকতাকে ধর্মচর্চার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধর্মীয় ভিত্তি; শ্লোক - ৪৯৪


পৌত্তলিক; শ্লোক - ৪৫৫

পশু কুরবানী ও পশু বলি
দুই মূলতঃ পৌত্তলিক বিষয়।
উভয় পন্থায় প্রাণীর হত্যা
ঈশ্বরকে সন্তুষ্টির লক্ষ্যে হয়।

পাদটীকা: যে ধর্ম মতে ঈশ্বর পশু বলীতে সন্তুষ্ট হন, সে ধর্ম পৌত্তলিক ধর্ম বৈ অন্য কিছু নয়।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

পৌত্তলিক; শ্লোক - ৪৫৫


সূর্য; শ্লোক - ৩১৪

সূর্য ঈশ্বর তূল্য;
উভয়েরই কারণ ধ্বংস ও সৃষ্টি।
জন্ম দেয় নতুনের,
খরা, মরা, তাপ, ঝড় ও বৃষ্টি।

পাদটীকা: সূর্য কেবলই একটি নক্ষত্রের নাম নয়, সূর্য আমাদের সৌরজগতের মধ্যমনি। সূর্য আছে বলেই পৃথিবীতে জীবন চক্র চলমান আছে।

সূর্য; শ্লোক - ৩১৪


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন