পিরানহা; শ্লোক - ১৯১

যে পুকুরের অধিকাংশ পিরানহা, 
সে পুকুরে নামতে লাগে ভয়। 
যদি অক্ষত না ফিরি, ক্ষতি করে; 
সর্বদা আতংক, মনে সংশয়। 

পাদটীকা: যে সমাজের অধিকাংশ মানুষ মানবিক শিক্ষার পরিবর্তে উগ্র মতাদর্শে দীক্ষিত হয়, মানবিকের পরিবর্তে ভিন্ন বিশেষ্যণে নিজেকে বিশেষায়িত করে, অন্য মতাদর্শের মানুষের প্রতি সহনশীলতার পরিবর্তে ঘৃণা লালণ করে। সে সমাজ ভিন্ন মতাদর্শীদের জন্য ঝুকিপূর্ণ স্থান।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

পিরানহা; শ্লোক - ১৯১


স্বর্গ; শ্লোক - ১১১

স্বর্গের বর্ণনা রূপকথায়
আর আছে ধর্ম কথায়।
সংসার-ভবে স্বর্গ মেলে
ভালো কাজ ও কথায়।

পাদটীকা: স্বর্গের বর্ণনা শুধুমাত্র রূপকথা বা ধর্মে বিরাজমান। আর স্বর্গের অস্তিত্ব ভূপৃষ্ঠে বর্তমান। স্বর্গ বিরাজমান পৃথিবীর প্রকৃতিতে, প্রাণীতে, মানব সংসারের ভালো কাজ, কথা ও কর্মে। 
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

স্বর্গ; শ্লোক - ১১১


প্রাক্তন; শ্লোক - ৭১

ফেলে যাওয়া প্রাক্তন 
বারবার ফিরে আসে। 
ইশারায় কাছে ডাকে, 
জানালায় এসে হাসে। 

পাদটীকা: অতীতের সাথে বর্তমান অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে যুক্ত, আর এই সম্পর্কের কারণে বারবার ফিড়ে আসে। গন্তব্য ভিন্ন হলেও কোথাও কোথাও আমরা একই পথ যাত্রী তাই আমরা বার বার প্রাক্তনের মুখোমুখি হই।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

প্রাক্তন; শ্লোক - ৭১


বিচ্ছেদ; শ্লোক - ৬৭

বিচ্ছেদে প্রারম্ভ মানব জন্ম;
প্রথমত ছেদ নাড়ীর, মা ও শিশুর।
বিচ্ছেদে অন্ত মানব জীবন;
শেষ ছেদ মায়ায়, জন ও স্বজনের।

পাদটীকা: ভূমিষ্ট হওয়ার পর মায়ের সঙ্গে আমাদের নাড়ীর সংযোগ কর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জীবন যাত্রা। স্বতন্ত্র চলতে চলতে আমরা মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হই, গড়ে ওঠে পরষ্পরের মাঝে অদৃশ্য নাড়ীর টান। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে, শেষ বারের মত বিচ্ছেদ হয় আত্মীয়তার সম্পর্কে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে। 

বিচ্ছেদ; শ্লোক - ৬৭

দক্ষতা; শ্লোক - ৬২

মৎস না জানে বৃক্ষারোহণ; 
সে সাঁতার কাঁটিতে দক্ষ। 
বাদর বৃক্ষারোহণে সুচারু; 
জলে ডুবে যায় আবক্ষ। 

পাদটীকা: কোন ব্যক্তি সাঁতারে বেশ দক্ষ কিন্তু, সে গাছে উঠতে জানে না। আবার, অপর ব্যক্তি গাছে উঠতে বেশ দক্ষ, কিন্তু সে সাঁতার জানে না। মোট কথা, বিভিন্ন বাঁধা বিপত্তি বা সীমাবদ্ধতার কারণে সকলেই সর্ব বিষয়ে দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ হতে পারে না।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দক্ষতা; শ্লোক - ৬২


দু মুখো; শ্লোক - ৫২

তুমি যাকে ভেবেছ বন্ধু
সে তোমাকে নয়।
তোমার পিছনে দুর্নাম
অন্য কাউকে কয়।

পাদটীকা: কোন কোন মানুষ একাধিক ব্যক্তিত্ব পোষণ করেন। সম্মুখে বন্ধুর ভান করেন আর পিছনে শত্রুতা লালন করেন। এরূপ ব্যক্তি সঙ্গে পরিহার করে চলা উচিত, কারণ তারা তাদের নিজেদের এবং অপরের জন্য ক্ষতিকারণ। প্রকৃতপক্ষে এরূপ ব্যক্তি কারোরই বন্ধু নয়। 
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দু মুখো; শ্লোক - ৫২


জলাধার; শ্লোক - ৪৫

সব স্থল ভূমি দেশ মহাদেশ 
খন্ড বিখন্ড দ্বীপমালা মাত্র। 
নীলাভ ধরণীর উপরিভাগ 
এক বিশাল জলাধার পাত্র। 

পাদটীকা: জল এবং স্থলের পরিমান বিচারে পৃথিবীকে ভূলোক না বলে জলাধার বলাই বেশি যৌক্তিক। কারণ, পৃথিবীর মোট আয়তনের তিন ভাগ হলো জল আর মাত্র এক ভাগ হলো স্থল।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

জলাধার; শ্লোক - ৪৫


খলনায়ক; শ্লোক - ৪৪

নায়কীয় বীরত্ব দেখাতে হলে 
খলনায়ক থাকা আবশ্যক। 
শক্তিশালী খলনায়ক পরাস্ত; 
নায়ক বীর, বাহবা প্রাপক। 

পাদটীকা: সেই গল্পে নায়কের ভূমিকা শক্তিশালী ও বীরত্বপূর্ণ যে গল্পে নায়কের তুলনায় শক্তিশালী খলনায়ক থাকে। তাই গল্পে নায়কের শক্তিশালী ভূমিকা শক্তিশালী খলনায়কের অনুপস্থিতিতে সম্ভব নয়।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

খলনায়ক; শ্লোক - ৪৪


নায়ক; শ্লোক - ৪৩

নায়ক যেথা দূর্বল, পরাস্ত; 
বিজয় খলনায়কে পায়। 
সেথা জয়গান নায়কের নয়, 
সবে খললায়কের গায়। 

পাদটীকা: দূর্বল বা পরাজিতরা সর্বদা গল্প বা ইতিহাসে নায়ক হিসেবে ঠাই পায় না। মানুষ সর্বদা বিজেতায় জয়কীর্তন করে, বিজেতাকে বিজয় মালা দিয়ে নায়ক হিসেবে বরণ করে। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষ দূর্বলের নয়, বরং সবল এবং বিজেতার পক্ষাবলম্বন করে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

নায়ক; শ্লোক - ৪৩


অনানুকূল্য; শ্লোক - ৪২

আগুনে ঢাললে তৈল ঘি
আগুন বাড়ে।
অন্যায়কে যদি দাও প্রশ্রয়
চাপিবে ঘাড়ে।

পাদটীকা: আগুনে তেল বা ঘি ঢালার অর্থ হলে, আগুনকে আরো জোরে জ্বলতে এবং আগুন দ্বারা প্রাকৃতিক সম্পদকে নষ্ট হতে সয়াহয়তা করা। অনুরূপ অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়ার অর্থ হলো অন্যায়কে প্রতিষ্ঠা পেতে সাহায্য করা এবং অন্যায়কারীকে অন্যায় করতে পরোক্ষ ভাবে উৎসাহিত করা। তাই, জীবনের কোন অবস্থাতেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়, এবং সততা নামক মূল্যবোধকে বিসর্জন দেয়া উচিত নয়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অনানুকূল্য; শ্লোক - ৪২


পণ্য; শ্লোক - ৪১

কেউ বেচে আলু পটল
কেউ গায়ের ঘাম শ্রম কর্ম।
কাঠ মোল্লার কিচ্ছু নাই
বেচে কুরআন হাদিস ধর্ম।

পাদটীকা: মানুষ পণ্য বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করে এবং জীবিকা নির্বাহ করে। পণ্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে, কারোর কাছে পণ্য হলো সময়, শ্রম, সেবা, সম্পদ বা উৎপাদিত কোন বস্তু। সমাজে একশ্রেণীর মানুষ আছেন যারা ধর্মকে পণ্য হিসেবে উপজীব্য করে চলে।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

পণ্য; শ্লোক -৪১



ধুরন্ধর; শ্লোক - ৪০

পাছে লোকে বলিবে সদা 
করো ভালো বা মন্দ। 
নিজ গায়ে মাখিবে সুবাস, 
তোমার গায়ে দূর্গন্ধ। 

পাদটীকা: ধুরন্ধর পাত্র সকল সমাজেই কম বেশি বর্তমান। এরুপ ব্যক্তি নিজের মিথ্যা গুণগান আর অন্য লোকের নিন্দা করতে বেশি পছন্দ করে; আপন স্বার্থ বাস্তবায়ণে বন্ধুর পিঠে ছুরি চালাতেও দ্বিধা করে না।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধুরন্ধর; শ্লোক - ৪০


খিচুড়ি; শ্লোক - ৩৮

চালের সাথে ডাল মিশালে
নাম হয় খিচুড়ি রান্নার তন্ত্রে।
ধর্মের ও রাজনীতি মিশ্রণে
হয় বিষ; দূষণ শুরু রাষ্ট্রযন্ত্রে।

পাদটীকা: কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ধর্ম এবং রাজনীতির সংমিশ্রণ সর্বস্তরের জনগণের জন্য মোটেও কোন দীর্ঘ মেয়াদি মঙ্গল বয়ে আনে না। ধর্ম এবং রাজনীতির সংমিশ্রনের ভয়াবহ ফল আমরা অতীত ইতিহাসে দেখেছি; বঙ্গভঙ্গ হয়েছে, হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা হয়েছে, শেষ পরিণতিতে ভারত ভাগ হয়েছে, বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, মানুষ আপন ভিটেমাটি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। তাই, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ব্যবস্থা সকলের কাম্য। 
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

খিচুড়ি; শ্লোক - ৩৮



ধর্ম কীড়া; শ্লোক - ৩৭

অন্ধ ধর্ম রক্তে শিরায়;
অন্ধ মানুষ ধর্মের পীড়ায়।
বিবেকহীন মনুষ্য দেহ,
মগজধোলাই ধর্ম কীড়ায়।

পাদটীকা: অন্ধ ধর্ম বা অন্ধ বিশ্বাস মানসিক অসুস্থতা তুল্য। দৃষ্টিহীন ব্যক্তি দৃষ্টি না থাকার দরুন সচক্ষে দেখতে পান না কিন্তু মনের দৃষ্টিতে সবই দেখতে পান। পক্ষান্তরে, অন্ধ ধার্মিক ব্যক্তি স্বচক্ষে সব দেখতে পেলেও প্রকৃতার্থে অন্তর চক্ষু শূন্য।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধর্ম কীড়া; শ্লোক - ৩৭

দুই খন্ড; শ্লোক - ৩৬

যদি বাংলা করি দুই খন্ড
হবে বাং এবং লা।
কেউ বলবে হায় ভগবান
কেউ হায় আল্লাহ।

পাদটীকা: শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ করা যায়, এটি শব্দকে দুইটি শব্দে রূপ দেয়া যায়। শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদের মতোই বাংলা এবং বাঙালি বিচ্ছিন্ন; ভৌগোলিক কারণে এপার বাংলা আর ওপর বাংলায়, আর ধর্মের সন্ধি বিচ্ছেদে বাঙালি মুসলিম আর বাঙালি হিন্দুতে।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দূরত্ব; শ্লোক - ৩৪

যেথা পাশাপাশি দুই জন;
দুটি মন আলোকবর্ষ দূরে।
সেথা দুই প্রাণ নাহি গায়,
একই সংগীত একই সুরে।

পাদটীকা: প্রেম ভালোবাসা পরস্পরের প্রতি ভালো লাগা, সম্মান বা মোহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার প্রতিফল। যেখানে অন্তরে পারস্পরিক আকর্ষণ বা ভালো লাগার অনুভূতি অনুপস্থিত সেখানে শূন্যতারা আবাস গড়ে। সেখানে শারীরিক নিকটাবস্থান দৃশ্যত হলেও মনের দূরত্ব সেখানে প্রগাঢ়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

দূরত্ব; শ্লোক - ৩৪


বাংলা পরিচয়; শ্লোক - ৩২

বাংলা স্বয়ং বাংলা নয়
দ্রাবিড় ভাষার শব্দ।
ইন্দো ইরানি বোধগম্য
দ্রাবিড় শুনে স্তব্ধ।

পাদটীকা: ভৌগোলিক ভাবে দ্রাবিড় ভাষাভাষী বাঙালির নিকটে বসবাস করা প্রতিবেশী। এবং উৎপত্তিগত ভাবে বাংলা শব্দটি দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের একটি শব্দ। কিন্তু মজার বিষয় হলো, আমরা বাঙালিরা ইন্দো ইউরোপীয় বা ইন্দো ইরানি ভাষা পরিবারের শব্দ যতটা বুঝতে পারি সে তুলনায় দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের শব্দ খুব কম বুঝতে পারি; কারণ বাংলা ভাষা দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের সংশ্লিষ্ট নয়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বাংলা; শ্লোক - ৩২


পাল্লা; শ্লোক - ৩০

মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে
সামনে এগিয়ে যাই।
অসীমের সাথে পাল্লা দিয়ে
বার বার হোঁচট খাই।

পাদটীকা: আমরা পরষ্পরের সাথে প্রতিযোগীতা করে সন্মূখে অগ্রসর হই, কিন্ত যে আমাদের চেয়ে বড় বা অসীম, তাঁর সাথে প্রতিযোগীতা করে পেরে উঠিন না। কারণ, মানুষ তার স্বীয় ক্ষমতা বা যোগ্যতার বাইরে কিছু করতে পারে না।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

পাল্লা; শ্লোক - ৩০


অপনীতি; শ্লোক - ২৮

যেথা রাজনীতির 'র' থাকে না,
ধর্মের নামে হয় সন্ত্রাসী।
সেথা আজরাইলের রূপে মানুষ
স্বয়ং বাঁজায় মরণবাঁশি।

পাদটীকা: যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনীতি এবং ধর্মের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতার জবর দখল চলে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। সে রাষ্ট্র পৃথিবীর বুকেই নরক তুল্য, সেথা মানুষের হন্তারক হিসেবে আজরাইল নয়, মানুষ স্বয়ং আজরাইলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

অপনীতি; শ্লোক - ২৮


প্রশ্ন বোধক; শ্লোক - ২৭

প্রশ্ন বোধক শব্দ থাকলেই,
সর্বদা তা প্রশ্ন বোধক নয়।
ক্রিয়াপদ ব্যবহার ভেদেও,
প্রশ্ন বোধক বাক্য গঠন হয়।

পাদটীকা: কোন বাক্যে প্রশ্ন বোধক শব্দ থাকলেই সর্বদা তা প্রশ্ন বোধক বাক্য হিসেবে অর্থ বহন করে না। পক্ষান্তরে কোন কোন ব্যাক্যে প্রশ্ন বোধক শব্দ অনুপস্থিত থাকা স্বত্তেও তা প্রশ্ন বোধক বাক্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়।
আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

প্রশ্ন বোধক; শ্লোক - ২৭


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন