ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯

বিজ্ঞান দিবে সমাধা, ত্রাণ
শত্রু অদৃশ্যমান।
ঈশ্বর নয়, মানুষ আনবে
সুদিন, সমাধান।

পাদটীকা: বর্তমান বিশ্বের সকলেই এক কঠিন সময় পার করছে। বর্তমানে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই অনেক বড় বিষয়। করোনা থেকে পরিত্রাণের উপায় কোনো অদৃশ্য সত্তা নয় রক্ত মাংসের মানুষেরাই আবিষ্কার করেছে, শিগ্রই সুদিন আসবে। কারণ, অদৃশ্য কোনো ঈশ্বর নয়, বরং মানুষ ও তার বিজ্ঞানই সংকটের প্রকৃত সমাধান আনতে সক্ষম। অদৃশ্য শত্রু—হোক তা ভাইরাস, দূষণ, বা অজ্ঞানতা—এর বিরুদ্ধে বিজ্ঞানই হাতিয়ার। এখানে ঈশ্বরের প্রতি অবিশ্বাস নয়, বরং অন্ধ বিশ্বাসের বিপরীতে যুক্তিবাদী, মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা—যেখানে সুদিন আসে মানুষ ও মননের হাত ধরে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ত্রাণ; শ্লোক - ৪৯৯


দৃঢ়তা; শ্লোক - ৫০০

যে বিশ্বাস ঠুনকো কথায় ভেঙ্গে যায়
তা ভেঙ্গে যাওয়াই ভালো।
যে প্রদীপ ঝড়ো বাতাসে টিকে থাকে
মনে এমন প্রদীপ জ্বালো।

পাদটীকা: যা ভঙ্গুর তা ভেঙে যাবে এটাই স্বাভাবিক, আর যা কিছু মজবুত তাই টিকে থাকবে। যে বিশ্বাস সামান্য কথায় ভেঙে যায়, তা প্রকৃতপক্ষে শক্ত নয়—তার টিকে থাকাও অনর্থক। বরং যে আলো ঝড়ো বাতাসেও নির্বাপিত হয় না, সেই আলোই সত্য, সেই বিশ্বাসই স্থায়ী। সম্পর্ক, আস্থা ও আত্মবিশ্বাস গড়তে হলে চাই মজবুত ভিত; এবং মনেও এমন এক দীপ্তি জ্বালাতে হবে, যা প্রতিকূল সময়েও নেভে না। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


দৃঢ়তা; শ্লোক - ৫০০


সুন্দর সত্তা; শ্লোক - ৪৯৮

কেউ দেখিতে সুন্দর
এর অর্থ এই নয় যে সে সুন্দর মানুষ।
সুন্দর হলো সেই গুণ
যা প্রকাশ করে ব্যক্তির কর্ম জ্ঞান-হুস।

পাদটীকা: বাহ্যিক সৌন্দর্য ব্যক্তির বাহ্যিক অংশে দৃশ্যমান যা আমরা চক্ষু দ্বারা উপলব্ধ করি, এই রূপ ব্যক্তির অন্তর্নিহিত স্বত্তাকে সর্বদা প্রতিনিধিত্ব করে না। চোখে দেখার মতো সুন্দর হলেই কেউ প্রকৃত অর্থে “সুন্দর মানুষ” হয় না।সৌন্দর্য এক গুণ, যা বাইরের চাকচিক্যে নয়, বরং মানুষের ব্যবহার, চিন্তা ও কার্যকলাপে প্রতিফলিত হয়। সত্যিকারের সৌন্দর্য প্রস্ফুটিত হয় তার চরিত্র, জ্ঞান, অনুভূতি ও কর্মের মাধ্যমে। ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ব্যক্তির আচরণে প্রকাশ পায়। বাহ্যিকতা নয়, বরং আভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ গুরুত্বপূর্ণ। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

সুন্দর সত্তা; শ্লোক - ৪৯৮


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭

ধার্মিকের অভিযোগ, “ধর্মীয় বিশ্বাস
হয়েছে আহত, ধর্মাবতার হয়েছে নত”।
ধর্ম মতে, “দৃঢ় বিশ্বাসী স্বর্গ লোকে;
নরকে যাবে, দুর্বল বিশ্বাসী আছে যত”।

পাদটীকা: একটি বিশেষ শ্রেণির ধার্মিক প্রায়শই অভিযোগ করে—তাদের ধর্মীয় অনুভূতি আহত হয়েছে, ধর্মাবতারকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ। অথচ ধর্ম নিজেই বলে—দৃঢ় বিশ্বাসীই স্বর্গের যোগ্য, আর দুর্বল বিশ্বাসী নরকে নিক্ষিপ্ত হবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: বিশ্বাস কি এতটাই দুর্বল যে সামান্য প্রশ্ন বা মতভেদেই তা ভেঙে পড়ে? নরক ও স্বর্গের চাবিকাঠি-ই বা কার হাতে?

এই ভাবনাগুলো এক গভীর ব্যঙ্গচিন্তার জন্ম দেয়—ধর্ম নয়, সংকটে পড়েছে মানুষের মনোভাব ও একচেটিয়া অধিকারবোধ। কারণ, যা সত্যিকারে দৃঢ়—তা হাজারো প্রশ্নেও নত হয় না; আর যা ঠুনকো, তা সামান্য স্পর্শেই আহত হয়। যদি কোনো ধার্মিক তার ধর্মানুভূতি আহত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন, তবে ধরে নেওয়া যায়—ঈশ্বরপ্রদত্ত ঈমানের পরীক্ষাতেও তিনি ব্যর্থ হবেন, কারণ তার বিশ্বাস মজবুত নয়, কেবল আবেগনির্ভর। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ধর্মানুভূতি; শ্লোক - ৪৯৭


ভাঙ্গনের ধারা; শ্লোক - ৪৯৬

নদীর স্রোতে ভাঙ্গে
বসত ভিটা জমি ঘর।
স্বার্থে সম্পর্ক ভাঙ্গে
স্বজন হয়ে যায় পর।

পাদটীকা: নদীর স্রোত যেমন ভাসিয়ে নিয়ে যায় বসতভিটা, জমি ও ঘর, তেমনি আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থ মানুষকে সম্পর্ক থেকে বিচ্যুত করে, আপনজনকেও পর করে তোলে। ভাঙন শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, মানসিক ও সম্পর্কগত বিপর্যয়ও সমানতর যন্ত্রণাদায়ক। বসতভিটা হারালে ঘর আবার গড়ে তোলা যায়, কিন্তু ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের জায়গায় হৃদয়ের পুনর্গঠন সহজ নয়।

তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য যে—কিছুই অকারণে ভাঙে না বা গড়ে ওঠে না। প্রতিটি ভাঙন বা পরিবর্তনের পেছনে থাকে গভীরতর কারণ, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য। সেই কারণগুলো অনুধাবন করাই জীবন ও সম্পর্কের পাঠ। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।


ভাঙ্গনের ধারা; শ্লোক - ৪৯৬


একাকীত্বের শপথ; শ্লোক - ৪৯৫

একলা জগতে আসা;
একলা লড়তে হয়, চলতে হয় পথ।
একলা এগিয়ে যাবো,
লক্ষ্যে পৌছে যাবো, এটাই শপথ।

পাদটীকা: একাকীত্ব দুর্বলতা নয়, বরং দৃঢ় আত্মনির্ভরতার প্রতীক। জীবনের শুরু একাকী—মানবশিশু জন্মায় একা, আর মৃত্যু গ্রহণও করে একাই। জন্ম ও মৃত্যুর মাঝের অস্থায়ী সময়ে কেউ পাশে থাকবে—এই আশায় স্থির না থেকে, নিজ পথ নিজেকেই গড়ে নিতে হয়। জীবনের পথে, সংগ্রামে কিংবা সাফল্যের পথে যদি কেউ সঙ্গ না-ও দেয়, তবুও থেমে যাওয়া উচিৎ না। অন্ধকার সময়ে নিজের ওপর বিশ্বাস রেখেই এগিয়ে যেতে হয়, কারণ লক্ষ্য অর্জনের সংকল্পই মানুষকে শক্তিশালী করে তোলে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জেনেও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের প্রকৃত শিক্ষা। একাকীত্ব কোনো অভিশাপ নয়, বরং তা আত্মশক্তির উন্মোচন। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

একাকীত্বের শপথ; শ্লোক - ৪৯৫


ধর্মীয় ভিত্তি; শ্লোক - ৪৯৪

ধরম তোমার ছিনিয়ে নিবে
চিন্তার স্বাধীনতা।
ঈশ্বরের নামে বিশ্বাস করাবে
মানুষের বলা কথা।
 
পাদটীকা: ধর্মের নামে চিন্তার স্বাধীনতা হরণ এবং অন্ধ বিশ্বাস চাপিয়ে দেওয়ার এক প্রখর সমালোচনা। ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, এখানে মানুষের জ্ঞান এবং মুক্ত ভাবনা ভয়ের সীমানায় আবদ্ধ। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা প্রচারক, স্বাধীন চিন্তাকে ছিনিয়ে নিতে চায়— নিজের বোঝাপড়া নয়, বরং তারা ঈশ্বরের নামে বিশ্বাস করাতে চায় এমন কথাগুলো, যা মানুষই তৈরি করেছে। মানুষের বলে যাওয়া কথা সমূহ, ধর্মে ঈশ্বরের কথা হিসেবে বিশ্বাস করানো হয়। ঈশ্বর কি সত্যিই চান, আমরা নিজে না ভেবে কেবল অন্যের মুখে শোনা মত অনুসরণ করি? মানুষের উচিৎ অন্ধভাবে কোন কিছু অনুসরণ না করে, বরং যুক্তিবোধ, চিন্তা ও মানবিকতাকে ধর্মচর্চার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

ধর্মীয় ভিত্তি; শ্লোক - ৪৯৪


শত্রুতা ও ঘাতকতা; শ্লোক - ৪৯৩

শত্রু করে শত্রুতা,
বিশ্বাস ঘাতকতা নয়।
বিশ্বাস ঘাতক সেই
যাকে বিশ্বাস করা হয়।

পাদটীকা: "শত্রু এবং বিশ্বাস ঘাতক" শব্দ দুটি সমর্থক হলেও এর অর্থ পুরোপুরি এক নয়, শত্রু হলেন তিনি যিনি শত্রুতা করেন আর বিশ্বাস ঘাতক হলেন তিনি যিনি বিশ্বাস ঘাতকতা করেন। শত্রুর কাছ থেকে শত্রুতা প্রত্যাশিত, তাই তার আঘাত ততটা বেদনার নয়। কিন্তু যাকে বিশ্বাস করা হয়—যে আপনজন, প্রিয় বা ঘনিষ্ঠ—তার বিশ্বাসভঙ্গই প্রকৃত ঘাতকতা। কারণ, সেই আঘাত আসে ভরসার ভিতর থেকে, যেখানে প্রতিরক্ষার কোনো প্রস্তুতি থাকে না। সবাই শত্রু নয়, কিন্তু সবাই বন্ধুও নয়। সত্যিকারের বিশ্বাসযোগ্যতা পরীক্ষা হয় সময়ে ও সংকটে। - আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

শত্রুতা ও ঘাতকতা; শ্লোক - ৪৯৩


জ্যোতিষী; শ্লোক - ৪৯২

যে জন জ্যোতিষী আপন ভাগ্য
নির্ণয় করিতে নাহি জানে।
জ্যোতিষী তাহার পদবী হলেও,
বিজ্ঞ জনে তাকে না মানে।

পাদটীকা: যে জ্যোতিষী আপন ভাগ্যের নির্ণয় বা পরিবর্তন করতে জানে না, সাধারণত তার করা ভাগ্য পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ বাণীতে কোন বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন লোক বিশ্বাস করে না।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

জ্যোতিষী; শ্লোক - ৪৯২


বই; শ্লোক - ৪৯১

ভূতের বই পড়িলে
ভৌতিক গল্প যায় জানা।
বিজ্ঞান বই পড়িলে
থাকেনা কেউ তালকানা।

পাদটীকা: শিক্ষার প্রকারভেদ রয়েছে, সুশিক্ষা এবং কুশিক্ষা। আপন প্রয়োজনেই আমাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিত। শিক্ষিত হওয়ার লক্ষ্যে আমাদের সেই বই পড়া উচিত। যে বই আমাদের ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেয়ার পরিবর্তে আমাদের চিন্তা করতে শেখায়, বিভিন্ন বিষয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে আমাদের জ্ঞানের দিগন্তকে প্রসারিত করে।
- আরিফুর রহমান, নরওয়ে।

বই; শ্লোক - ৪৯১


পরিসংখ্যান

গোপনীয়তা | শর্তাবলী | যোগাযোগ

শব্দ শুনুন